রীতি মেনে যমের হিসাবরক্ষক চিত্রগুপ্তের পুজোপাঠ আরামবাগের বাতানলে

মহেশ্বর চক্রবর্তী

হুগলি জেলার শেষ সীমায় অবস্থিত আরামবাগের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হল বাতানল। ১১৫ বছর ধরে চিত্রগুপ্তর পুজো করে আসছেন এই অঞ্চলের কায়স্থপাড়ায় প্রায় ১৮টি পরিবার। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হল না। রীতি মেনে হল যমের হিসাবরক্ষক তথা ঠাকুর চিত্রগুপ্তের পুজো। জানা গিয়েছে, এই বাতানল অঞ্চলের বাসিন্দা ভূপালচন্দ্র সরকার পাড়ায় চিত্রগুপ্ত পুজোর আয়োজন করেন বিংশ শতাধীর প্রথম দশকে। তখন এই এলাকায় তেমন বসতি ছিল না। গ্রামের মাটির রাস্তায় কাদা-জলে পরিপূর্ণ ছিল। তার মধ্যেই এলাকার সমস্ত কায়স্থ পরিবারকে একত্র করে তিনি পুজোর সূচনা করেন। বংশ পরাম্পরায় আজও নিয়ম মেনে পুজো করছেন বর্তমান প্রজন্ম। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই পুজোয় সমান অংশীদার। ভাইফোঁটায় চিত্রগুপ্তের পুজোয় দিয়ে ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন বোনেরা। এই বছর ভাই ফোঁটাতে তার ব্যতিক্রম হল না।
গ্রামের মানুষ আনন্দের সঙ্গে এই চিত্রগুপ্তের পুজোতে সামিল হয়েছেন। পাশাপাশি আরামবাগ ছাড়াও আশপাশের বর্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার বহু মানুষ চিত্রগুপ্তের পুজো দেখতে এসেছেন। এলাকার মানুষের দাবি, রাজ্যে মধ্যে কলকাতার একটি জায়গার পর একমাত্র এই গ্রামেই পূজিত হন চিত্রগুপ্ত। তবে কলকাতার ওই জায়গায় পুজো হচ্ছে কিনা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। চিত্রগুপ্ত নিজে ছিলেন কায়স্থ। স্বর্গরাজ্যে তাঁর গুরুত্বও ছিলো অপরিসীম। তিনি যমের হিসাবরক্ষক। সেখানে যমুনা তাঁর দাদা যমের দীর্ঘায়ু কামনা করে ফোঁটা দিয়েছিলেন। আর মানুষের আয়ুর হিসেব রাখার খাতা চিত্রগুপ্তের হাতে। তাই তাঁকে তুষ্ট করতে এখানকার বাসিন্দারা চিত্রগুপ্ত পুজোর প্রচলন করেন। তাঁদের ধারণা, চিত্রগুপ্তকে তুষ্ট করলে ভাইয়েরা দীর্ঘায়ু পাবেন। জানা গিয়েছে, গ্রামের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে এলেও, গ্রামের বউরা কেউ বাপের বাড়ি যান না। তাঁদের ভাইরা আসেন ফোঁটা নিতে। সরকার বংশের বর্তমান প্রজন্ম সদস্য শিলাদিত্য সরকার বলেন, ‘আমরা খুব আনন্দ করি। ১১৫ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ ভূপালচন্দ্র সরকার চিত্রগুপ্ত পুজো চালু করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, চিত্রগুপ্তকে তুষ্ট করতে পারলে ভাইয়েরা দীর্ঘায়ু লাভ করবেন। যমের হিসাবরক্ষক চিত্রগুপ্ত ছিলেন কায়স্থ। আমরাও কায়স্থ। আমাদের পূর্ব পুরুষ হিসাবে তাই চিত্রগুপ্তকে পুজো করা হয়। অন্যদিকে ওই গ্রামেরই মহিলা দেবদত্তা দে বলেন, যতই কাজ থাকুক। সব ফেলে বাপের বাড়ি আসি। কলকাতা থেকে এসেছি। ছোটবেলা থেকেই আমরা এনজয় করি। কিন্তু এই চিত্রগুপ্তের পুজো দেখতে বাপের বাড়িতে চলে আসি। খুব আনন্দ করি। আর ভাইয়েদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। পাশাপাশি ওই গ্রামের প্রবীন মানুষ কল্যাণ দত্ত বলেন, এটা আমার জন্মের আগে থেকে হচ্ছে। কায়স্থ সম্প্রদায়ের পুজো। গোটা ভারতবর্ষে মধ্যে দুই জায়গা হয়। আমরা প্রাচীন ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছি। সবমিলিয়ে এই বছর করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি বিধি মানা হলেও পুজোর আয়োজনে কোনও ত্রু«টি রাখেনি বাতানল অঞ্চলের মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 1 =