সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচির তৃতীয় দিন হুগলি জেলায়। এদিন তিনি আরামবাগের ভালিয়া মাঠে জনসভা করেন এবং ওই মাঠেই চলে তৃণমূল কর্মীদের ভোট গ্রহণ। এদিন সভাকে কেন্দ্র করে মহিলাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মঞ্চে উঠেই প্রথমেই নিজের দলের নেতাদের সমালোচনা করেন তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন,পঞ্চায়েতে জিতে গেছি মানে করে খাওয়ার লাইসেন্স নয়। কোন প্রধান কেমন কাজ করছেন চার মাস অন্তর অন্তর নিজে পর্যালোচনা করব। ত্রিপল পাওয়ার জন্য বা কোনও কিছু পাওয়ার জন্য প্রধানের বাড়িতে কাউকে যেতে হবে না। ইতিমধ্যে একাধিক প্রধানকে আমি বহিষ্কার করেছি। এবারের পঞ্চায়েতের টিকিট কোনও জেলার নেতা বা রাজ্য নেতার সুপারিশে হবে না। ঠিক করবে খেটে খাওয়া মানুষ। হুগলির ১৮ টার মধ্যে আরামবাগের চারটি ছাড়া সব বিধানসভা আমরা জিতেছি । আরামবাগ মহকুমায় কোনও মহিলা যদি বলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাইনি তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। বিজেপি বাংলায় হেরেছে বলে সমস্ত ধরনের ঢাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ভদ্রতা করে জোড়হাত করে অনুরোধ করেছি বাংলার বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র দেয়নি। আরামবাগের যে চারজন বিধায়ক জিতেছে তারা দিল্লিতে চিঠি লিখে বলেছে আপনাদের টাকা আটকে দেওয়ার জন্য। এ টাকা বিজেপির পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। এখন আমাদের কাছে দুটো রাস্তা আছে, পায়ে পড়ো না হয় দিল্লি চলো। আপনারাই বলুন কোনটা করব? চিৎকার করে বলুন দিল্লি চলো। আমরা আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আপনাদের নিয়ে দিল্লি যাব। আমরা বাংলা থেকে ১০ লক্ষ মানুষ নিয়ে দিল্লি যাব। বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কথা দিয়েছিল সব রেখেছেন। আচ্ছে দিনের সরকার ৪০০ টাকার গ্যাসকে বারোশো টাকা করেছে। ওষুধের দাম বাড়িয়েছে, দেশে লক্ষ লক্ষ বেকার। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সবার ২০২২ সালের মধ্যে পাকার বাড়ি করে দেবেন, কোনও কথা রাখেননি তিনি। বিজেপির নেতারা আরামবাগে আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আরামবাগ নদীমাতৃক এলাকা। এখানে দেওয়া ঘাট ও পারাপার নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। কৃষিপণ্য নিয়ে আরামবাগের কোনও ঘাটে পারাপার হলে আগামী দিনে এক টাকাও নেওয়া হবে না। এই নির্দেশ তিনি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে দিয়েছেন। কোনও এজেন্সি যদি ৫ টাকার বেশি কোনও বাহক আরোহীর কাছ থেকে আদায় করে তাহলে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির এগুলি মনিটরিং করা উচিত তারা কিছু করে না। কৃষিপণ্য নিয়ে সাইকেলে, হেঁটে বা যেকোনো কাজে খেয়া-পারাপার হলে কোনও টাকা নেওয়া যাবে না। আরামবাগ, খানাকুল, পুরশুড়ার এমএল এরা কোনওদিন বিধানসভায় আপনাদের কথা বলেনি। কেন্দ্রীয় সরকার কুড়ি হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেন্ট্রাল ভিস্তা করছেন কটা লোকের থাকার জন্য। ৫০ কোটি টাকা খরচ করলে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ঘটতো না, কিন্তু বিজেপির কাছে আগে নিজেদের বাড়ি বানানো জরুরি। তবু তারা সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করবেন না। হুগলি জেলায় যে কটা আবর্জনা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেগুলিকে ঝাঁটা মেরে বিদায় করতে হবে। এরপর তিনি বলেন, তিনি সভা শেষ। করার পর ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হবে সাধারণ মানুষ ভোট দেবেন। তাদের ভোটের উপরই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক হবে। সেই মতো ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সবমিলিয়ে এদিন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি প্রথম থেকে তৃণমূল নেতাদের সংশোধন হওয়ার বার্তা দেন তেমনি বিজেপির বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন।