অভিষেকের নিশানায় এবার মন্ত্রী ও পুরপ্রধানদের একাংশ। সূত্রের খবর, অভিষেক ঘনিষ্ঠ মহলে বার্তা দিলেন, ‘কাজ করুন, না হলে পদ ছাড়ুন।’ পঞ্চায়েত, পুরসভা এমনকি মন্ত্রিত্বের ক্ষেত্রেও ২০২৬-এর আগে এই নীতি গৃহীত হওয়া উচিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল আর রাস্তা এই ৪ ক্ষেত্রে আরও কাজ করতে হবে। নবজোয়ার কর্মসূচিতে যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ করতে হবে। ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর দলের অন্দরে এমনই বার্তা দিয়েছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। পাশাপাশি, সূত্রের খবর, অভিষেক এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর প্রশাসন বা সরকারে যোগ দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় নেই। তবে ওড়িশায় বিজু জনতা দলের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা থেকে দলের সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রথমে এক্স হ্যান্ডেলে রাজনীতি ও সংগঠন থেকে ‘ ছোট্ট বিরতি’ নেওয়ার পোস্ট, আর তারপর দলের অন্দরে অভিষেকের এই বার্তা! স্বাভাবিকভাবেই যা উসকে দিয়েছে নানাবিধ জল্পনা।
প্রসঙ্গত, গতকাল এক্স-হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন অভিষেক। যেখানে তিনি জানান, চিকিৎসার কারণে রাজনীতি ও সংগঠন থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিচ্ছেন। সাংগঠনিক কাজ থেকেও দূরে থাকবেন। এক্স-হ্যান্ডেলে অভিষেক লেখেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে যে শারীরিক সমস্যা চলছে, সেটার কারণে আমি সংগঠন থেকে ছোট্ট বিরতি নিচ্ছি।’
তবে ‘ছোট্ট বিরতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটের শেষার্ধে এই শব্দবন্ধ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা ছড়ায়। কারণ এর আগেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। আগে কখনও সংগঠনের কাজ থেকে বিরতি নেওয়ার কথা এভাবে ‘ঘোষণা’ করেননি তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। যদিও ‘ছুটি’র ব্যাখ্যা হিসাবে অভিষেক জানান, ‘গতবছর এরকম সময়ে নবজোয়ার যাত্রায় অংশ নিয়ে গোটা বাংলা ঘুরে দেখার এবং মানুষের সমস্যা বোঝার সুযোগ হয়েছিল আমার। একশ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষকে কী ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সে ব্যাপারেও আমার সম্যক ধারণা হয়েছিল। তা আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।’ অর্থাৎ জনগণের সুবিধা-অসুবিধা এবং চাহিদার কথা আরও ভাল ভাবে বোঝার জন্য এই সময় কাজে লাগাবেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, ‘২০২৪ লোকসভা ভোটের ফলাফল মানুষের রাগ ও হতাশা চোখে আঙুল দিয়ে স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে, বিশেষত কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে বাসস্থানের যে মৌলিক অধিকার তা উপেক্ষিত হওয়ায়। আমরা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এর সমাধান করব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এই বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আমি ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি।’ এখানেই শেষ নয়। অভিষেক আরও লিখেছেন,আমি বিশ্বাস করি, রাজ্য সরকার দ্রুত এবং ভালভাবে মানুষের সমস্যার সমাধান করবে এবং মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করবে।’
এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা. নির্বাচনের আগে ছ’মাস কার্যত নানারকম কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন ‘অসন্তুষ্ট’ অভিষেক। লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি সক্রিয় হয়েছিলেন। দলের প্রয়োজনের ছুটে গিয়েছেন সর্বত্র। লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এক সঙ্গে সামনে এসেছে দলের সাফল্য উদযাপন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এসবের পরই অভিষেকের এই টুইটে জল্পনা চড়তে বাধ্য স্বাভাবিকভাবেই। এদিকে ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, তখনই জানা গিয়েছিল, প্রশাসনিক কাজ নিয়েও কিছুটা অসন্তুষ্ট রয়েছেন অভিষেক। অভিষেকের টুইটের শেষার্ধে উল্লেখ ছিল, সরকার যেন দ্রুত গতিতে প্রশাসনিকভাবে আটকে থাকা কাজ সম্পন্ন করে, এই আশা তিনি রাখছেন। অর্থাৎ, প্রশাসনের একাংশের কাজ নিয়ে তিনি যে অখুশি, তা কিছুটা আভাসও মিলেছে।পাশাপাশি অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল বলছেন, পৌরসভার প্রশাসনিক কাজ নিয়ে অখুশি অভিষেক। ২০২৬ সালে পৌরসভা নির্বাচন রয়েছে। সূত্রের খবর, অভিষেক বেশ কয়েকজন মেয়র ও পুরপ্রধানদের কাজ নিয়েও অসন্তুষ্ট রয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর স্পষ্ট বার্তা হয় কাজ করুন, না হলে পদ থেকে সরে যান। আর এখানেই প্রশ্ন উঠে গেল, নতুন করে পুরনো অসন্তোষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল কি না তা নিয়েই।