শালবনিতে আক্রান্ত অভিষেকের কনভয়, ভাঙল মন্ত্রী বীরবাহার গাড়ির কাঁচ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নবজোয়ার কর্মসূচিতে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল ঝাড়গ্রাম ব্লকের অন্তর্গত শালবনি এলাকায় পাঁচ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর । পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘চোর, চোর’ স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কুড়মি সামাজিক সংগঠনের মানুষজনেরা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম শহরে নবজোয়ার কর্মসূচির রোড শো শেষ করে লোধাশুলি আসার পথে ঘটে এই ঘটনা। কনভয়ের প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি বেরিয়ে যায়। আর তখনই আচমকা সেখানে শুরু হয় তুমুল কুড়মি বিক্ষোভ। তারই জেরে লাঠির ঘা পড়ে অভিষেকের কনভয়ের গাড়িতে। পেছনেই ছিল মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার গাড়ি। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। ইটের আঘাতে তাঁর গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে যায়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। এছাড়াও তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার পাশাপাশি, লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এমনকী মারধরও করা হয় তৃণমূল কর্মীদের। ঘটনায় আহত হন পুলিশ কর্মীরাও।
এদিকে স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর, শুক্রবার ঝাড়গ্রাম জেলায় একাধিক কর্মসূচি ছিল তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিন সকালে বান্দোয়ান মাঠে তৃণমূলের ক্যাম্প মিটিংয়ে যোগ দেন তিনি। সেখানেই তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। এরপর ইন্দিরা চক দিয়ে বিনপুর এলাকায় জনসংযোগ যাত্রা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লোধাশুলি এলাকায় জন সংযোগ যাত্রা করেন অভিষেক। এরপরই গোপীবল্লভপুরে রাতে অধিবেশন কর্মসূচি ছিল তাঁর। সেখানে দলীয় কর্ম কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার পথে ঘটে এই ঘটনা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। এর আগে পুরুলিয়ায় তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের আন্দোলনকারীরা। পুরুলিয়া জেলা জুড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে তাঁরা বিক্ষোভ দেখবেন বলে জানানো হয়। এরপরই ঝাড়গ্রামে কুড়মি সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়কে। এই প্রসঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, এদিন কোন রাস্তা দিয়ে যে অভিষেকের কনভয় যাবে তা আগে থেকেই ঠিক ছিল। সেই মতো জায়গায় জায়গায় ছিল পুলিশি নিরাপত্তা। কিন্তু, কনভয় আসার অনেক আগে থেকেই কুড়মিরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করতে শুরু করেন। রাস্তায় বসে পড়েন। পুলিশ শত চেষ্টা করেও তাদের তুলতে পারেনি বলে খবর। এরমধ্যে এলাকায় এসে পড়ে অভিষেকের কনভয়। আটকে যায় পুলিশের গাড়ি। তখন সবে সন্ধ্যা নামছে। এরপর যত সময় গড়িয়েছে, যতই বেড়েছে অন্ধকার, ততই যেন তেজ বাড়ে ক্ষোভের আগুনের। এই ঘটনার জেরে নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে খবর পেয়েই ঘটনাস্থল যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন পুলিশ আধিকারিকেরা।
এদিকে শনিবার শালবনি যাওয়ার কথা রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যোগ দেওযার কথা রয়েছে নবজোয়ার কর্মসূচিতে। মেদিনীপুরের মাটিতে থাকছেন খোদ অভিষেকও। তার আগে এ ঘটনা ঘটায় স্বভাবতই ব্যাপক চাপানউতর শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে।
সূত্রে এ খবরও মিলছে, শালবনির বিক্ষুব্ধ কুড়মিদের মূল ক্ষোভ মূলত বাঁকুড়ায় করা অভিষেকের মন্তব্যে। সেখানে অভিষেক বলেছিলেন, কুড়মিরা শাসক তৃণমূলকে ভোট দেয় না। ভোট দিলে পুরুলিয়ায় ২ লক্ষের বেশি ভোটে হারত না তৃণমূল। সূত্রের খবর, এই মন্তব্যের জেরে কয়েকদিন ধরে ক্ষোভে ফুঁসছেন কুড়মিরা। এদিন অভিষেকের সেই মন্তব্যের তারই প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এদিকে এ খবরও মিলছে, এদিন অভিষেক পুরুলিয়ায় দলীয় বৈঠকে দলের নেতাদের বার্তা দেন, ‘কুড়মি সমাজের মানুষের কাছে যান। তাঁদের বোঝান, রাজ্য সরকার তাদের তরফে সব চেষ্টা করছে৷ জনপ্রতিনিধিদের এই কাজটুকু করতে হবে।’ একইসঙ্গে একহাত নেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে জানান, ‘দিলীপ ঘোষ কুড়মিদের উদ্দেশ্য অসম্মানজনক কথা বলে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আপনারা সেটা গিয়েই বোঝান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 1 =