কলকাতা: প্রেমের টান। সেহ টানেই স্বামী-সংসার-দেশ ছেড়ে নদী সাঁতরে প্রেমিকের কাছে এলেন তরুণী।
বাস্তব এ গল্প নিয়ে সিনেমা হলে বোধহয়, অনেকেই বলতেন এ যেন বাড়াবাড়ি। এমনটা আবার হয় নাকি। এমনটা যে হয়, তার সাক্ষী নরেন্দ্রপুর। এ যুগের ‘লায়লা-মজনুর’ গল্প এখন সকলের মুখে মুখে।
২২ বছরের কৃষ্ণা মণ্ডল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে কালিন্দী নদী সাঁতরে হিঙ্গলগঞ্জ এসে পৌঁছন। নদীতে কুমীরের ভয় ছিল। তবে সব বাধা পেরিয়ে তিনি এসেছিলেন। যদিও শেষটা সুখের হয়নি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর সেসব দেখে পালিয়েছে প্রেমিক, নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা ২৬ বছরের অভীক মণ্ডল। জানা গেছে, কৃষ্ণা বাংলাদেশের শ্যামনগরের বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। স্বামীর নাম পরিমল মণ্ডল। কিন্তু ফেসবুকে অভীককের সঙ্গে আলাপের পর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কৃষ্ণা। বাড়ি থেকে পালিয়ে সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ সীমান্তে আসেন তিনি। কিন্তু ভারতে আসার পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না তাঁর কাছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনের জঙ্গলঘেরা পথে নদী পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় ঢোকার পরিকল্পনা করেন তিনি। তা করতে গেলে পেরোতে হবে নদী। কিন্তু সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নজরদারি এড়িয়ে তা কী করে সম্ভব! ১৮ দিন ধরে তক্কে তক্কে ছিলেন তিনি। তার পরে সুযোগ আসে কালিন্দী নদীতে নামার। ৬০ ফুট চওড়া নদী সাঁতরেই হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে কৈখালি। একেবারে খালি হাতে সেখানে পৌঁছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে ফোন চেয়ে অভীককে ফোন করেন কৃষ্ণা। এর পরে গত ৬ এপ্রিল অভীকের এক বন্ধু একটি গাড়ি নিয়ে কৈখালি গিয়ে নরেন্দ্রপুরে অভীকের বাড়িতে পৌঁছে দেন তাঁকে।
এদিকে কৃষ্ণার শ্বশুরবাড়িতে স্বাভাবিক ভাবেই শোরগোল পড়ে যায়। এদিকে, রানিয়ায় অভীকের প্রতিবেশীরা জানান, কৃষ্ণা ও অভীক কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করেন এপ্রিল মাসে। তার পরে সংসার শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্যেই কৃষ্ণার নদী পেরিয়ে আসার কথা জানাজানি হয়ে যায় পাড়ায়। কৃষ্ণা তাঁদের বলেছিল, বিয়ের পর থেকে নিয়মিত মারধর করা হত তাঁকে। কৃষ্ণার স্বামী পরিমল মণ্ডল অবশ্য এই মারামারির কথা স্বীকার করেননি। তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পরে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন বিয়ের কথা। তার পরেই কলকাতায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ™রিমল ২১ মে নরেন্দ্রপুর থানায় স্ত্রী কৃষ্ণার নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে তদন্তও শুরু হয়। এর পরেই নরেন্দ্রপুরের রানিয়া এলাকায় কৃষ্ণার খোঁজ মেলে। রবিবার কৃষ্ণাকে অভীকের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অভীক ও তাঁর পরিবারের কারও কোনও খোঁজ মেলেনি এখনও।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ মোতাবেক ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা রুজু হয়েছে কৃষ্ণার বিরুদ্ধে। তিনি এখন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে রয়েছেন, জেল হেফাজতে।