দুর্গাপুরের মিলনপল্লিতে উদ্ধার দম্পতি ও পুত্র-কন্যার দেহ

দুর্গাপুরের মিলনপল্লিতে উদ্ধার হল এক দম্পতি এবং তাঁর দুই ছেলে মেয়ের দেহ। সূত্রে খবর, রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে দেখা যায় পরিবারের কর্তা অমিত মণ্ডলকে। পাশেই বিছানার ওপর পড়েছিল স্ত্রী রূপা মণ্ডলের নিথর দেহও। সঙ্গে ঘরে পড়ে থাকেত দেখা যায় তাঁদেরই বছর সাতেক ছেলে নিমিত মণ্ডল আর মাত্র এক বছরের মেয়ে নিশিতা মণ্ডলের দেহও। এদিকে সূত্রে খবর মিলছে মৃত্যুর ঠিক আগ দিয়েই ফেসবুক একটা পোস্ট করেন অমিত। এই পোস্টে অমিত লেখেন, ‘উই কুইট! আমরা ৪ জন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমাদের মৃত্যুর জন্য ২ জন দায়ী। আমার মা আর বর্ষা। মা, বর্ষা আর কৃষ্ণর যে এতো কেনও হিংসা আমাদের উপর আজও বুঝতে পারলাম না। আমরা তো তোমাদের কোনও ক্ষতি করিনি, বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমিই সব করেছি তোমাদের জন্য। এবার তোমরা বুঝতে পারবে আমরা না থাকলে তোমাদের কি হয়! তুমি থাকো মা তোমার ভাই-ভাইপোদের নিয়ে এবার শান্তিতে, আমরা চললাম, আমাদের কোনও দরকার নেই তোমার।’
একইসঙ্গে এও লেখেন, দুই সন্তানকে মারতে এর আগে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, সফল হননি। এই প্রসঙ্গে যে লেখা তাঁর ফেসবুকের পোস্টে মিলেছে তা অনেকটা এমন যে, ‘আমি আমার নিজের হাতে রূপা বাবু আর বুনুকে মেরে আমি নিজে মরলাম। আগে দু বার চেষ্টা করেছিলাম। রূপা আর বাবু মরতে চায়নি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না।’ একইসঙ্গে এ আর্জিও জানিয়ে যান, ‘বাবু আর বুনুকে যেন নতুন জামা-কাপড় পরিয়ে দাহ করা হয়। আলমারিতে আছে। আর আমাদের যাবতীয় জিনিস সব যেন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘরে যেন আমাদের কোনও ছবি না থাকে।’
এদিকে এই ফেসবুক পোস্টে পরিবার ও আত্মীয়দের একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে গেছেন অমিত। মামা সুধীর নায়েকের ছেলে সুশান্ত নায়কের ওরফে নান্টু নামেও রয়েছে সেখানে। অমিতের তাঁর ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, তাঁর লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে, তার ব্যবসা বন্ধ করে, সম্পত্তি হাতিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছেন নানটু। পোস্টের শুরুতেই মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি অমিতের লেখায় এসেছে এই বোন বর্ষার কথাও। বোন বর্ষা আর ভগ্নিপতি কৃষ্ণর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেছে তাঁর এই ফেসবুক পোস্টে। এদিকে সূত্রে খবর, এঁরা থাকেন বেঙ্গালুরুতে। ফেসবুক পোস্টে অমিত লেখেন, তবে গোটা পোস্টেই বারবার মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করে গিয়েছেন অমিত। অভিমান ঝরে পড়েছে মায়ের বিরুদ্ধেও। যদিও এ বিষয়ে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের না হলেও অমিতের মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে যে খবর মিলছে তাতে অনেকেই দাবি করছেন, সম্পত্তিঘটিত কারণে খুন করে ফেলা হয়েছে অমিতের গোটা পরিবারকে। এদিকে খুন করার তত্ত্ব খুব একটা জোরালো হচ্ছে না একটা কারণেই। তা হল যে লেখাটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে সেটাই মৃত্যুর আগে লেখা আর এই লেখাই বেশ কিছু পরিচিতকে হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠিয়েছিলেন অমিত। এই লেখা পরিচিতদের কাছে পৌঁছানোর মধ্যেই নিজেদের জীবনে ইতি টানলেন মণ্ডল পরিবারের দুই খুদে সহ মোট চার সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =