চলন্ত ট্রেনে সার্ভিস রিভলবারের গুলিতে আত্মঘাতী কর্মরত জিআরপি কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদন, বর্ধমান: চলন্ত ট্রেনে ডিউটি চলাকালীন নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে ট্রেনের ভিতরেই আত্মঘাতী হলেন রেল পুলিশের এক কর্মী। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পরে বর্ধমানের পালসিট স্টেশনে।
এসআরপি হাওড়া (জিআরপি) পঙ্কজ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে আপ হাওড়া বর্ধমানের শেষ লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরায় ডিউটি করার সময় রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ পালসিট স্টেশনের কাছে নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন শুভঙ্কর সাধুখাঁ (৪৪)। পারিবারিক অশান্তির জেরেই তিনি আত্মহত্যা করেন বলে অনুমান। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নিজের মাথায় গুলি চালানোর আগে তাঁর মোবাইলে একটি ফোন এসেছিল। সেই ফোন পাওয়ার পরই শুভঙ্কর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।
শুভঙ্কর বর্ধমান জিআরপিতে পোস্টিং ছিলেন। বর্ধমানের বড়নীলপুরে তাঁর বাড়ি। তিনি বর্ধমান শহরের শাখারিপুকুর এলাকায় এক ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। দেহ শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঠিক কী কারণে এই আত্মহত্যা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান জিআরপি থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। যদিও মৃতের মা আরতি সাধুখাঁর দাবি, বউমার জন্যই তাঁর ছেলে আত্মঘাতী হয়েছেন। বিয়ের পর থেকেই বউ ও শাশুড়ি তাঁর ছেলের ওপর মানসিক অত্যাচার করতেন। সে জন্যই ছেলে আত্মঘাতী হয়েছেন। আরতীদেবীর দাবিকে সমর্থন জানান পাড়া প্রতিবেশীরাও। প্রতিবেশী বেবি দাসের দাবি, বছর দশেক আগে বিয়ে হয় শুভঙ্করের। বিয়ের পর থেকেই বউ, শাশুড়ি ও শালা অত্যাচার করত ওঁর ওপর। শুভঙ্কর খুব ভালো ছেলে ছিল।
পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, মৃত শুভঙ্কর সাধুখাঁর ৮ বছরের এক সন্তান রয়েছে। প্রতিবেশী বাসন্তী দাসের দাবি, বউয়ের চাপে শুভঙ্কর বাড়ি ভাড়া নিয়ে অন্যত্র চলে যান। শুভঙ্কররা দু’ভাই। বড় দাদার দোকান আছে। তাই বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও দাদা বাবার চাকরি ছোট ছেলে শুভঙ্করকে করতে বলে। সেই থেকেই রেল পুলিশের চাকরি করতেন শুভঙ্কর। আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে জিআরপি।
জিআরপি সূত্রে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি বর্ধমান জিআরপি থানায় কর্তব্যরত ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে মৃত ব্যক্তির একটি পার্স উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া রিভলভারে পাঁচটি গুলি ভর্তি ছিল। একটি গুলি ট্রেনের কামরার দেওয়ালে গেঁথে যাওয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, যে ট্রেনটি ব্যান্ডেলের দিক থেকে বর্ধমান আসছিল। সেই ট্রেনে কনস্টেবল শুভঙ্কর সাধুখাঁর সঙ্গে সুজিত ভৌমিক নামে আরও একজন কর্তব্যরত পুলিশ ছিলেন। তাদের তালান্ডু থেকে বর্ধমান ডিউটি ছিল বলে জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে। সবমিলিয়ে রাতের শেষ ট্রেনে সুরক্ষায় থাকা প্রায় ফাঁকা কামরায় নিজের সার্ভিস রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে এক কনস্টেবলের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় রহস্য তৈরি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − one =