বনস্পতি দে, হরিপাল
‘আবাস’হীন একটা গোটা পাড়া। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের মাথার ছাদ পাকা করার কথা সরকারেরই। অন্ততপক্ষে সরকার তাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি। কিন্তু অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি তো দূরের কথা, তাঁদের দিকে ফিরেও তাকায় না কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্বই। ক্ষোভ নেই, কারণ ওঁদের আশাও নেই, হুগলির হরিপালের কৃষ্ণপুর গ্রামের বেলেরপাড় এলাকার বাসিন্দাদের কেবল বুকভরা গ্লানি রয়েছে বলে দাবি।
এই পাড়ায় প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশটি পরিবারের বসবাস, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তালপাতার ছাউনি, তো কারও টালির চাল, কারওবা খড়ের চাল, কেউ কেউ ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছেন। কারও আবার ছিটে বেড়ার ঘর তো কারও মাটির দেওয়াল তাও আবার ভাঙা। অভিযোগ, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলির দিকে তাকিয়ে দেখেনি কেউ, না বাম না ডান। তবে তাঁদের দাবি, ভোট এলেই তাঁরা হয়ে যান রাজা আর ভোট ফুরালেই হয়ে যান প্রজা। ভোটের সময় বিভিন্ন দলের নেতা নেত্রীদের পায়ের ধুলো পড়ে গ্রামে। ভোটের পর ভুলেও নেতা নেত্রীরা পা দেন না এই পাড়ায়।
এই পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা নেওয়া হয় ঠিক ভোটের আগে, আর ভোট ফুরালেই চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয় স্থানীয় নেতাদের। ভোট মিটলেই নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সাহসটুকুও পান না তাঁরা। একপ্রকার জমিদারি প্রথার মধ্যে দিন কাটে তাঁদের। ঝড়বৃষ্টি মাথায় করেই দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছেন এই পাড়ার বাসিন্দারা। প্রকৃত প্রাপক হয়েও কেন সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, তার উত্তর তাঁদের কাছে অজানা।
আরও অভিযোগ, এলাকায় পানীয় জলের কল বসানো হয়েছে কিন্তু জল নেই, আবার শৌচালয় তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে আবেদনের জন্য টাকা মিটিয়ে দিলেও তাও মেলেনি। প্রচণ্ড শীতে চরম দুর্দশা নেমে এসেছে এই পাড়ায়। একপ্রকার দিনের পর দিন শোষিত নিপীড়িত বাসিন্দারা। যার যত বড় ছাদ তার লিস্টে আগে নাম এটার নাম কাটমানি কটাক্ষ বিরোধীদের।
আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির দাবি, ‘বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামের উন্নয়নের জন্য কোনও গ্রামসভা হয় না, গ্রাম সভা হয় নেতাদের বাড়িতে, ফলে যে ১০-২০ হাজার কাটমানি দিতে পারলে, তাঁর নামেই বাড়ি আসছে।’ যদিও হুগলি জেলাসভাধিপতি রঞ্জন ধারার দাবি, ‘গরিব মানুষের মাথার ওপর পাকা ছাদ থাকুক এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান। কিন্তু কেন্দ্র সকারের বঞ্চনার কারণে শুধু হরিপাল নয়, হুগলির বহু গরিব পরিবার মাথার ওপর পাকা ছাদহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।’