মাটি চাপা পড়ে শিশুদের মৃত্যুর তদন্তে চোপড়ায় পৌঁছল বিশেষ প্রতিনিধি দল

রায়গঞ্জ: উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের চেতনাগছ সীমান্তে ড্রেন খনন করার সময় মাটিচাপা পড়ে ৪ টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করতে স্টেট কমিশন অফ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসয়ের ৫ সদস্যর এক প্রতিনিধিদল বুধবার চোপড়ায় পৌঁছল। বুধবার রাতে মৃত এক শিশুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে তারা বিএসএফের সাথে ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। এদিন সকালে ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মৃত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ জনের এক প্রতিনিধিদল এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে দেখা করে। বিএসএফের পক্ষ থেকে এরপর এই ধরনের কাজে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া থানার চেতনাগছ গ্রামে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ছোট নিকাশী নালা ছিল। সেই নিকাশীনালা আকারে বড় করার জন্য জেসিবি দিয়ে নালা তৈরির কাজ চলছিল। সেই সময় এলাকার বেশ কিছু শিশু সেই কাজ দেখতে গিয়েছিল। আচমকা সেই গভীর নালার মাটি ধসে যায়। মাটির তলায় চাপা পড়ে স্থানীয় ৪ শিশু। স্থানীয় মানুষ ও বিএসএফ জওয়ানেরা তাদের উদ্ধার করে চোপড়া দলুয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ময়নাতদন্তের পর এদিন ভোরে তাদের মাটি দেওয়ার কাজ শেষ হয়। শাসকদলের পক্ষ থেকে ঘটনার পরপরই এই ব্যাপারে বিএসএফের গাফিলতিকে দায়ী করা হয়।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চোপড়ার দাসপাড়া এলাকায় বিএসএফ ক্যাম্পের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের বৃহস্পতিবার ছিল তৃতীয় দিন। কর্মসূচিতে উপস্থিত স্থানীয় বিধায়ক হামিদুর রহমান জানিয়েছেন, বিএসএফের পক্ষ থেকে মৃত শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন জারি রাখা হবে।

স্টেট কমিশন অফ প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসয়ের পক্ষ থেকে চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ঘটনাস্থল ঘুরে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি, পুরো ঘটনার জন্য বিএসএফের গাফিলতি রয়েছে। বুধবার রাতে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনায় তারা এই কথা স্বীকার করে নিয়েছে। বিএসএফ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এরপর থেকে এই ধরনের কাজে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। এই ধরনের কাজের আগে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে মাইকিং করতে হবে। যাতে পরিবারের সদস্যরা বাড়ির শিশুদের প্রতি নজর রাখতে পারে। কাজ চলার সময় তার কাছাকাছি যাতে কেউ না যেতে পারে, সেইজন্য পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশনের পক্ষ থেকে বিএসএফকে এই প্রস্তাবগুলি পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি গোটা ঘটনায় তাদের গাফিলতির জন্য কমিশন তাদের শোকজ লেটার পাঠাবে। লায়লা বানু নামে এলাকার তৃতীয় শ্রেণির একটি ছাত্রী প্রথম ঘটনাটি খেয়াল করে। সে তার ক্ষুদ্র ক্ষমতায় তার ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দৌড়ে গ্রামে খবর দেয়। তার এই সাহসিকতার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে বীরাঙ্গনা পুরস্কার দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − 6 =