সিংহলি ব্রাহ্মণ পুরোহিত দিয়ে হয় কালিয়াচকের মণ্ডল বাড়ির পুজো

শতাধী প্রাচীন প্রথা মেনে আজও কালিয়াচকের রামনগর গ্রামের মণ্ডল বাড়িতে দুর্গা পুজো করেন শ্রীলঙ্কার পুরোহিত। যদিও এবারে শ্রীলঙ্কা দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও শত বাধা পেরিয়ে শুধুমাত্র দেবী মায়ের ডাকেই সিংহলি এই ব্রাহ্মণ পুরোহিত বলরাম মিশ্র কালিয়াচকের মণ্ডল বাড়িতে আসবেন পুজো করতে। মণ্ডল পরিবারের পুজোর প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। কথিত আছে, একসময় এই পুজোর শুরু শ্রীলঙ্কায়। পরবর্তীতে পূর্বপুরুষের হাত ধরেই পুজো চলে আসে ভারতে। তার থেকেই সিংহলি পুরোহিতদের দিয়েই দেবী মায়ের আরাধনা সূচনা করা হয়। নিষ্ঠার সঙ্গে চলে চার দিন ধরে দেবী দুর্গার আরাধনা। যা দেখতে আশেপাশের মানুষজন ভিড় করেন। পূর্বপুরুষদের প্রাচীন প্রথা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে টিকিয়ে রেখেছেন মণ্ডল পরিবারের প্রবীণ এবং নবীন সদস্যরা।
উল্লেখ্য, কালিয়াচক ৩ ব্লকের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আকন্দবেরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামের ডিলার পাড়া এলাকা। সেখানেই রয়েছে মণ্ডল পরিবার। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যরা পৃথকভাবে থাকলেও দেবী মায়ের পূজোর সময় সকলেই এক হাড়িতেই খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারেন। চলে নানা রীতি রেওয়াজ মেনে পুজোর আয়োজন। পুজোকে ঘিরে এলাকায় মেলাও বসে। মণ্ডল পরিবারের এক সদস্য হেমন্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা আকন্দবেড়িয়া গ্রাম। সেখানেই রয়েছে ডিলার পাড়া। পরিবারের অনেক সদস্যরা চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত। যে যার মতো সারা বছর কাজ করে উপার্জন করেন। কিন্তু পুজোর কটা দিন সকলেই এক। বাড়িতে দেবী মূর্তি ওঠে। তার সঙ্গে বৈষ্ণব মতেই চলে পুজো। এই পুজোকে ঘিরে নানান গল্পকথিত রয়েছে।
মণ্ডল পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের কথায়, অখণ্ড ভারত থাকাকালীন পুজোর শুরু। পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন দিয়ে দেবী দুর্গা মণ্ডল পরিবারে এসেছিলেন। শ্রীলঙ্কা থেকে এই পুজো পাড়ি দেয় ভারতে। পুজোর শুরু থেকেই সিংহলি পুরোহিত দিয়ে দেবী মায়ের আরাধনার প্রচলন রয়েছে। তাই আজও নিষ্ঠার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পুরোহিত দিয়েই দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। এবারও সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চার দিন শ্রীলঙ্কার পুরোহিত বলরাম মিশ্র থাকবেন ডিলারপাড়ার মণ্ডল পরিবারের বাড়িতে। সন্ধি পূজার সময় দেবীমাতা যেন জীবন্ত দুর্গার রূপ নেয়, এমনই বক্তব্য এলাকার বাসিন্দাদের। আর সেই সন্ধি পূজা দেখতে আজও ভিড় হয় কালিয়াচকের মণ্ডল পাড়ার বাড়িতে। ভক্তদের বক্তব্য, সে সময় মানত করলেই পূরণ হয় সমস্ত মনস্কামনা। তাই কালিয়াচকের মণ্ডল পরিবারের দেবী দুর্গার পুজো জাগ্রত হিসেবেই চর্চিত রয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 1 =