গণধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা, ২৪ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দিল হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতাn গণধর্ষণের শিকার, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া ১১ বছরের নাবালিকাকে ২৪ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মেডিক্যাল বোর্ড এ ব্যাপারে সম্মতি দেওয়ার পর বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যর নির্দেশ, মেয়েটির যত দ্রুত সম্ভব গর্ভপাত করানো হোক এসএসকেএম হাসপাতালে । বিচারপতি ভট্টাচার্য জানান, মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি আইনের (১৯৭১) ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নাবালিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আদালত চিন্তিত। তাই সময় নষ্ট না করে বৃহস্পতিবার সকালেই এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ অগস্ট নির্মিত মেডিক্যাল বোর্ড সোমবার কলকাতা হাইকোর্টকে জানায়, ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির গর্ভপাত করানো যাবে। তবে সেটা তমলুক হাসপাতালে না করে একটু আধুনিক হাসপাতালে করলে ভাল হবে বলে জানানো হয়েছে। এরপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, এসএসকেএম হাসপাতালে সেই কাজ হোক। এসএককেএম হাসপাতালকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে যত দ্রুত সম্ভব মেয়েটির গর্ভপাত করানোর ব্যবস্থা করার জন্য।
জানা গিয়েছে, তমলুকের বাসিন্দা, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া, ১১ বছরের ওই নাবালিকা কয়েক মাসে আগেই গণধর্ষণের শিকার হয়। তবে তার জেরে যে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে, তা এত দিন জানতে পারেনি পরিবার। মেয়ে ছ’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ার পর বাবা-মা বিষয়টি জানতে পারেন। জানতে পারার পরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁদের। সিদ্ধান্ত নেন গর্ভপাতের। তবে এ জন্য হাসপাতালে গেলে সেখান থেকে তাদের বলা হয়, ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। এখন উচ্চ বা শীর্ষ আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনও ভাবেই গর্ভপাত সম্ভব নয়।
তাই তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চলতি মাসের ১৬ তারিখে। আবেদন করেন, ২৪ সপ্তাহের ভ্রূণ গর্ভপাত করাতে চান মেয়ের। আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরে জরুরি ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হয়। তাতে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন নাবালিকার বয়স নিয়ে। মেয়েটির পরিবারের আইনজীবী আদালতে জানান, মেয়েটি একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এখন সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। তবে সেই নাবালিকা সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো মানসিক বা শারীরিক অবস্থায় নেই। ২৪ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের নজির বিরল, তবে এক্ষেত্রে নাবালিকার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আদালত অনুমতি দিক।
আইনজীবী জানিয়েছেন, মেয়েটির পরিবার আর্থিক ভাবে খুবই দুর্বল। লেখাপড়াও বিশেষ জানা নেই, আইনকানুন সম্পর্কে অবহিত নন তাঁরা। সেই কারণেই গণধর্ষণের রিপোর্টও পুলিশকে জানাতে দেরি হয়েছে। রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সাহায্যে পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে সবেমাত্র গত মাসে। তার পর থেকে নাবালিকা এখন হোমে রয়েছে। সে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে বেশ দুর্বল। তাছাড়াও একটি ১১ বছরের মেয়ের পক্ষে সন্তানের জন্ম দেওয়া ও দায়িত্ব নেওয়া প্রায় অসম্ভব। তার মেডিক্যাল রিপোর্টও বলছে, বয়স কম হওয়ায় গর্ভস্থ সন্তানের ওজন কম রয়েছে এবং অন্য সমস্যাও বেশ কিছু রয়েছে।

এর পরেই, এমন অবস্থায় নাবালিকার গর্ভপাত সম্ভব কিনা তা জানতে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও তমলুক হাসপাতাল সুপারকে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালত জানায়, পরের ৪৮ ঘণ্টায় নাবালিকার যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। সব মিলিয়ে সোমবার সেই রিপোর্ট জমা করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
সেই মোতাবেক আজ হাইকোর্টে জমা পড়ে রিপোর্ট। মেডিক্যাল বোর্ডের সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরে পরামর্শ শুনেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত।
আইন অনুযায়ী, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ২০ সপ্তাহ সময় পর্যন্ত গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে তা ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যায় ঠিকই, তবে সব দিক বিবেচনা করে চিকিৎসকরা যদি নিরাপদ বোঝেন তবেই। এরও পরে গর্ভপাত করাতে গেলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =