কারও কাছে তিনি অন্নদাতা। আর বেশিরভাগের কাছে তাঁর পরিচিতি ‘হসপিট্যাল ম্যান’ হিসেবে। যিনি করোনাকালে কলকাতার তিনটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় আসা পরিজনদের মুখে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিয়েছেন। কালীঘাটের পার্থ করচৌধুরী।তাঁর মহান কর্মযজ্ঞে সামিল হয়ে এই সেবাকাজকে আরও বিস্তৃত করার জন্য ফুড ভ্যান উপহার দিলেন তুনীর মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি।
কোভিডের সময় মানুষ যখন নিজের পরিবারকে নিয়ে নিরাপদে বাড়ির ভিতরে কাটিয়েছে সেই ভয়াল দিনগুলোতেও অকুতোভয় সৈনিকের মতো নিজের স্বপ্ন পূরণের লড়াই চালিয়ে অভুক্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অবশেষে শনিবার একটি স্বপ্ন সফল হলো হসপিটাল ম্যান ওরফে পার্থ করচৌধুরীর। শনিবার কালীঘাটেই তুনীর মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি তাঁকে ফুড ভ্যান কিনে দিলেন। এই গাড়িতে একটি রান্নাঘর রয়েছে। এটা ব্যবহার হবে হাসপাতালের রাস্তায় পড়ে থাকা রোগীর আত্মীয়দের জন্য দুবেলা খাবার জোগাতে।
প্রসঙ্গত, পেশায় পুলকার চালক পঞ্চশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি সেই সব মানুষদের কাছে অন্নদাতা হয়ে উঠেছেন, যাঁরা অসহায়। বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এক ব্যক্তি তাঁর গাড়ির পেছনের ডিকি থেকে খাবার দিচ্ছেন বহু মানুষকে। কলকাতার সরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করাতে আসা লোকজনদের অনেকেই আসেন গ্রামগঞ্জ থেকে। রোগীর চিকিৎসা কার্যত বিনামূল্যে হলেও, তারপরেও অনেকেরই পেট ভরে খাবার টাকা থাকে না হাসপাতাল চত্বরে। বিশেষত করনোকালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছিল। লোকের কাজ ছিল না। সেই সময় ঘরে বসে না থেকে ‘অন্নদাতার’ ভূমিকায় বেরিয়ে পড়েন পার্থবাবু।
করোনাকালে তাঁকে দেখা গিয়েছে ত্রাতার ভূমিকায়। কলকাতার তিন সরকারি হাসপাতালের রোগীর পরিজনের মুখে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিচ্ছেন। এক্কেবারে বিনামূল্যে। পেশায় পুলকার চালক পাথের্র লকডাউনে স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এটাই তাঁর রোজনামচা। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ মা, বাবা, স্ত্রী ও এক মেয়ে। কিন্তু করোনার কোপে গতবছর স্কুল বন্ধ হওয়া থেকেই উপার্জন নেই। তবু তিনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। নিজের পরিবারের বাইরেও বৃহত্তর পরিবারের ডাকে তিনি সাড়া দিয়েছেন।
করোনাকালে, এমনকী তার পরেও কখনও হোটেল রেস্টুরেন্টের উদ্বৃত্ব খাওয়ার জোগাড় করে, কখনো নিজের বাড়িতে রান্না করে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের অন্ন জুগিয়েছেন। অনেকে সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে খাবারের ব্যবস্থা করতে সাহায্যও করেছেন। চাল, ডাল কিনতে সাহায্য করেছেন। তাঁকে এভাবে মানুষের পাশে থাকতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তুনীর মুখোপাধ্যায়। শনিবার রক্তদান আর হেলথ চেকআপ ক্যাম্প হয়। সারাদিনের অনুষ্ঠানে এই ভ্যান তার হাতে তুলে দেওয়া হল।
পার্থ জানান, ‘আমার স্বপ্ন ছিল কমিউনিটি কিচেন গড়ে অভুক্ত মানুষগুলোর জন্য কিছু ব্যবস্থা করা। তাতে দেখলাম, অনেক খরচ। চেষ্টা করেছি একটি ছোট মালবাহী গাড়িকে সম্পূর্ণ রান্নাঘরে বদলে নেওয়ার। তা হলে ষোলো ঘণ্টা ঘুরে ঘুরে অনেক রোগী ও তাঁদের পরিজনকে খাবার দিয়েছি। তবে আজকে ভ্রাম্যমান এই সম্পূর্ন রান্নাঘর পেয়ে আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হল।’