ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হল ১৩ বছরের এক নাবালকের। আর এই ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের চিকিৎসায় উদাসীনতার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদের সরব হয়েছেন মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা। এমনকী মৃত নাবালকের বাড়ির আশেপাশের পরিবেশে মশার আঁতুর ঘর তৈরি হওয়ায় অসন্তোষ ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াচক থানার সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সারানপাড়া এলাকায়। মৃত ওই বালকের নাম নাসিম শেখ (১৩)। বুধবার সকালে ওই নাবালকের মৃত্যুর পর তার বাড়িতে গ্রামবাসীরা ভিড় করতে থাকেন। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে চরম অসন্তোষ। সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন মৃতের পরিবার থেকে গ্রামবাসীরা। মৃত নাবালকের আত্মীয়দের অভিযোগ, নাসিম শেখের ডেঙ্গু ধরা পরলেও তার প্লেটলেট এক লক্ষ বিরাশি হাজার ছিল। জ্বর কমছিল না বলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এদিন ভোররাতে নাসিম শেখকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। আর তারপরেই ভোরে কর্তব্যরত এক নার্স ইনজেকশন দেওয়ার পরই মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু হয় নাসিম শেখের। কি এমন ইনজেকশন তাদের রোগীকে দেওয়া হল সেই সম্পর্কে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। আর এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ছড়িয়েছে সুজাপুরের সারান পাড়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। পাশাপাশি সারানপাড়া এলাকায় জঞ্জালের স্তূপ, অপরিচ্ছন্ন নিকাশী নালায় মশার উপদ্রব ক্রমাগত বাড়তে থাকায় অসন্তোষ ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
মৃত নাবালকের এক আত্মীয় সারিফুল হক জানিয়েছেন, নাসিম শেখের কয়েক দিন ধরে জ্বর কম ছিল না। প্রাইভেটে ডাক্তার দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে ডেঙ্গু ধরা পড়ে, কিন্তু ওর প্লেটলেট খুব ভালো ছিল। জ্বর কম ছিল না বলে মেডিক্যাল কলেজে এদিন ভোরে তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই নাসিম শেখের মৃত্যু হয়। কি এমন ইনজেকশন দেওয়া হল সেই বিষয়ে আমরা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক বা নার্সেরা কিছুই জানায়নি। শুধু তাই নয়, গোটা এলাকায় মশার আঁতুরঘর তৈরি হয়েছে। কোনওরকম হেলদোল নেই সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের। মশাবাহিত রোগের উপদ্রব ক্রমাগত বাড়ছে। এক মাসের মধ্যে এই এলাকাতে তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তারপরেও উদাসীন সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মৃত নাবালকের মা হাসিনা বিবি জানিয়েছেন, প্রাইভেট ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ডেঙ্গু ধরা পড়লেও ছেলে ভালো ছিল এমনটাই জানিয়েছিল চিকিৎসকেরা। এদিন ভোররাত থেকে ছেলে বমি করছিল, জ্বর কমছিল না। ফলেই ওকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ছেলে কথাও বলছিল। হঠাৎ করে কর্তব্যরত এক নার্স ইনজেকশন দেওয়ার পরই ছেলে মারা গেল। আমরা মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসার গাফিলতির জন্য ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
সুজাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ আরিফ আলি জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই নাবালকের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মৃত্যুর খবর শুনেছি। কিন্তু এলাকায় পরিছন্নতার কাজ করা হচ্ছে।