বুবুন মুখোপাধ্যায়
অমরনাথ দর্শনে গিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়লেন আসানসোলের একদল যুবক। আসানসোল গ্রামের শ্যামলেন্দু রায়, অমিত রায় সহ ১২ জন গিয়েছেন অমরনাথ দর্শনে। এরা সকলেই আসানসোল গ্রামের একটি ক্লাবের সদস্য। ওই যুবকদের পরিবার রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। ওই যুবকরা তাঁদের পরিবারকে কোনওক্রমে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। জানিয়েছেন কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছেন তাঁরা। আসানসোল গ্রামের শ্যামলেন্দু রায় তিনি কোনও মতে প্রাণে বেঁচেছেন। শ্যামলেন্দুর দাদা বিমল রায় বলেন, যে সময় পাহাড়ি বান ধেয়ে এসেছিল তখন ভাই ও ভাইয়ের বন্ধুরা কোনওক্রমে দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। প্রাণে বেঁচে গেলও টাকা পয়সা জিনিসপত্র সব জলস্রোতে খোয়া গিয়েছে। এদিন দেখা গেল, দুর্ঘটনার শিকার যুবকদের পরিবারের সদস্যদের চোখ এখন শুধুই টিভিতে। শ্যামলেন্দু রায়ের স্ত্রী মুনমুন রায় বলেন, আমরা উদ্বেগে রয়েছি। ওখানে কারোর ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, ফোনের ব্যাটারিতে চার্জও নেই। তবু ঘন ঘন মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, কেউ আটকে রয়েছেন ক্যাম্পে কেউ বা হাঁটা পথে পাহাড় বেয়ে নেমে আসছেন বিপদমুক্ত জায়গায়। তবে একটাই স্বস্তি ওই ১২ জন আপাতত বিপদমুক্ত। তবু বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত উদ্বেগেই রয়েছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। শ্যামলেন্দু রায়ের দাদা, মা, স্ত্রী জানিয়েছেন সেই রোমহর্ষক ঘটনার কথা। জানা গিয়েছে, শ্যামলেন্দু রায়সহ বন্ধুরা অমরনাথ দর্শন করে বেরিয়ে লঙ্গরখানায় যখন খাবার খাচ্ছিলেন, তখনই পাহাড়ি বান ধেয়ে আসে। যখন পাহাড় বেয়ে বান নেমে আসছে তখন কানের কাছে শুধু আওয়াজ শুনতে পান ভাগো ভাগো। দিকশূন্য হয়ে তারা উঁচু জায়গায় দৌড়নো শুরু করেন। তবুও জলে ভিজে যান। কেউ বা আছড়ে পড়ে যান। চোখের সামনে দেখেন পাহাড়ি বান কিভাবে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সবকিছু। ভাসিয়ে নিয়ে গেল ওই লঙ্গরখানাকে। শ্যামলেন্দুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যখন ওই বান নেমে এসেছিল তখন অন্ততপক্ষে ওই এলাকায় ২০০ জন পূণ্যার্থী ছিলেন। তারমধ্যে আমরাও ছিলাম। যখন পাহাড়ি বান নেমে এল আমরা পালিয়ে বাঁচলেও চোখের সামনে জনা ২৫ মানুষকে দেখলাম ভেসে যেতে। বহু পূণ্যার্থী ভেসে নিখোঁজ হয়ে গেলেন চোখের সামনে। আসানসোল গ্রামের রায় পরিবারের সদস্যদের এখন একটাই প্রার্থনা যেন গ্রামের ছেলেরা সুস্থ ও বিপদ মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। ৪ জুলাই আসানসোল থেকে ওই ১২ জন যুবক রওনা হয়েছিলেন অমরনাথ দর্শনে। তাদের লেহ লাদাখ যাওয়ার কথা। ফিরে আসার কথা ছিল ১৮ জুলাই। তবে আপাতত সব বাতিল করে সকলেই বাড়ি ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের ডিপিডিআর তোমাজিৎ চক্রবর্তী বলেন, আমরা খোঁজ চালাচ্ছি ওখানে জেলার আর কতজন আটকে রয়েছেন। ওই পরিবার যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আমরা নবান্নে যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে তার মাধ্যমে ওই এলাকা থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করব।