নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: এ এক অভিনব মেলা। যেখানে শয়ে শয়ে মানুষ হাজির হয়ে একসঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করেন মুড়ি। সঙ্গে চলে দেদার আনন্দ হই-হুল্লোড়। কিন্তু এত সবের পরেও এই মেলার বিশেষত্ব একটাই, এখানে কেনাকাটার কোনও বালাই নেই।
এই মেলা ‘মড়গড়িসিনি’ নামে পরিচিত। সকালে মেলাজুড়ে মুড়ি ছাড়া অন্য কোনও খাদ্য দ্রব্যের চল নেই। ফি-বছরই অভিনব এই মেলাকে ঘিরে মানুষের আকর্ষণ থাকে বাঁকুড়ার সিমলাপালের পুখুরিয়া গ্রামে। শীতের রোদ গায়ে মেখে যে মেলায় হাজির হন ৭ থেকে ৭৭-সকলেই। কী ভাবে এই মেলার উৎপত্তি, সেই রহস্যে উদঘাটন করতে গিয়ে উঠে এসেছে আরও এক অভিনব তথ্য। একসঙ্গে বসে মুড়ি খেলে নাকি সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়!-এমনটাই দাবি উদ্যোক্তা থেকে গ্রামের প্রবীণ মানুষদের। কয়েকশো বছরের পুরনো এই মেলা ফি-বারের মতো এবারও শুরু হয়েছিল মকর সংক্রান্তির দিন। এদিনই ছিল মেলার শেষ দিন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রাম্য দেবতা মড়গড়ি সিনির বাৎসরিক বিশেষ পুজো উপলক্ষে মকর সংক্রান্তির দিন বসে এই মেলা। প্রত্যেকেই বাড়ি থেকে মুড়ি নিয়ে এসে এই গ্রাম্য দেবতার সামনে বসে খান। যা মকর সংক্রান্তি পরবর্তী তিন দিন একই ভাবে চলতে থাকে। জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে গ্রাম্য দেবতা মড়গড়িসিনি কোনও এক বৃদ্ধকে স্বপ্নাদেশ দেন। তাঁর নির্দেশে এখানে বিশেষ পুজোপাঠ, মেলার আয়োজন ও মুড়ি মেলার সূচনা হয়।
যদিও অন্য একটি অংশের মতে, গ্রামের প্রতিটি পরিবারের মধ্যে একতা সৃষ্টির জন্য এই অভিনব মুড়ি মেলার সূচনা। কারণ বাঁকুড়ার মানুষের জল খাবারের অন্যতম উপাদান মুড়ি। সকলে একসঙ্গে বসে বছরের চারটে দিন মুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করলে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। পরবর্তীকালে এই প্রথাই মুড়ি মেলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। অন্য মেলার সঙ্গে এই মেলার পার্থক্য একটাই, এখানে মুড়ি বা অন্যান্য দ্রব্যের কোনও বিক্রির ব্যবস্থা থাকে না। বাড়ি থেকে মুড়ি এনে মড়গড়ি সিনির থানে এলাকার সব মানুষ একসঙ্গে বসে খান- এটাই রীতি।
মুড়ি মেলায় অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা শান্তিনাথ কর্মকার বলেন, ‘একদম ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে আসছি। বছরের এই চারটে দিন গ্রাম ও এলাকার সবাই এখানে এসে মুড়ি খাই। এমনকি আত্মীয়স্বজনরাও বাদ থাকেন না। এই চারটে দিন বাড়িতে কেউ মুড়ি খায় না।’ সারাটা বছর তাঁরা প্রত্যেকেই এই চারটে দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বলে জানান।