নিজেদের প্রস্রাবকে বোতল বন্দি করে রাখতে হয়েছিল তৃষ্ণ মেটানোর জন্য, ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ত্রিকুট থেকে ফেরা মালদার পর্যটক

দেওঘরের ত্রিকুট পাহাড়ের দুর্ঘটনায় রোপওয়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা আটকে ছিলেন মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার কয়েকটি পরিবারের ৮ জন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে জলের অভাবে নিজেদের প্রস্রাবকে বোতল বন্দি করে  রাখতে হয় তৃষ্ণ মেটানোর জন্য।  রোপওয়ের মধ্যে দুর্ঘটনার সময় আঘাত খেয়ে এবং আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পরেন মালদার বেশ কয়েকজন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য  দেওঘর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বুধবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যের দেওঘর ফেরত সেইসব যাত্রীরা ভয়াবহ রোপওয়ে দুর্ঘটনার কথা শোনালেন। যা  রীতিমতো শিহরণ জাগানোর মতো।

উল্লেখ্য, গত রবিবার দুপুরে দেওঘরের ত্রিকুট পাহাড় রোপওয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কয়েকজনের। জখম হন প্রায় কুড়ি জন। এরপর সেই দুর্ঘটনার পর আরো বেশকিছু রোপওয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে থাকে। সেই ঝুলন্ত রোপওয়ের আটকে পরেন মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ৮ জন পর্যটক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  তাদের নাম পুতুল শর্মা (৪৫),  সুবীর দত্ত (৬৫), সাহেব দাস (২৫), নমিতা দাস (৪০),  বিনয় দাস (৫৫), দেবাঞ্জন পাল (৪২), ঝুমা পাল (৩২)। এদের প্রত্যেকের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। শনিবার মালদা থেকে ৫০ জন যাত্রী নিয়ে দেওঘর ঘোরার জন্য একটি বেসরকারি বাস ভ্রমণে গিয়েছিল। আর রবিবার হরিশ্চন্দ্রপুরের এই বেশ কয়েকজন রোপওয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। কয়েকজন জখম হন, আবার কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গত রবিবার বিকেলে ঝুলন্ত অবস্থায় মুখোমুখি দুটি রোপওয়ে কেবিনের ধাক্কা লাগাতেই দুর্ঘটনার ঘটে বলে জানান স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই ঘটনার জেরে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই দুর্ঘটনার জেরে বারোটি রোপওয়ে ওপরে আটকে যায়। প্রায় ২২ জন দর্শনার্থী ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ওই রোপওয়ে গুলির মধ্যে আটকে ছিল। দুর্ঘটনার কাজে উদ্ধারের জন্য সোমবার দিন সকাল থেকে নামানো হয় ইন্ডিয়ান আর্মি, আইটিবিপি, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের জাওয়ানদের।

দুর্ঘটনায় আটকে পড়া হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা বিনয় দাস বলেন, হরিচন্দ্রপুরের বাজারপাড়া এলাকা থেকে আমরা বাসে করে দেওঘর ভ্রমণে গিয়েছিলাম। কখনো ভাবতে পারেননি এভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারব। ঝুলন্ত রোপওয়ের মধ্যে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরা কেবিনের মধ্যে গাদাগাদি করে আটজন বসেছিলাম। হাফ বোতল পানীয় জল ছিল। এক সময় প্রস্রাব সংরক্ষণ করে বোতলে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম এটা দিয়ে হয়তো তৃষ্ণা মিটাতে হবে। আমরা বাঁচতে পারবো সেটা ভাবতে পারেনি। আমার স্ত্রীর কাঁচের ধাক্কায় জখম হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এভাবে ২৪ ঘন্টা কেটেছে। সোমবার যখন জাওয়ানেরা আমাদের উদ্ধার করে, তখন আর মুখে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না । সরাসরি দেওঘর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। অবশেষে বুধবার মালদার বাড়িতে ফিরতে পেরেছি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  গত শনিবার সকালে হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা বাজার থেকে একটি বাস দেওঘর এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই বাসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন এমনকি মালাহার, সামসি, রতুয়া বাহারাল, মানিকচক, কালিয়াচকের বাসিন্দারাও ছিল বলে জানা গিয়েছে।

রোপওয়ে দুর্ঘটনা ফেরত সুবীর দত্ত বলেন, রবিবার দুপুরে ত্রিকুট পাহাড় এসেছিলাম। সেখানে পাহাড়ে ওঠার জন্য ক্যাবলকারে চড়ার জন্য টিকিট কেটেছিলেন আমাদেরই কয়েকজন বাসের সহযাত্রীরা। তাদের মধ্যে চারজন ওই ক্যাবলকারে জায়গা পেয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় কেবিলকার গুলো। সেনাবাহিনীদের জন্যই আমরা প্রাণে বাঁচতে পেরেছি । নইলে এই দুর্ঘটনার পর আমাদের হয়তো লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two − two =