মালদার গাজলের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাধার মুখে কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে নির্যাতিতার পরিবারের বাড়ির সামনেই হাতাহাতি। জুতো হাতে বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে। এরপর গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে কার্যত গ্রাম ছাড়েন ওই তৃণমূল নেত্রী। শনিবার সকালে পূর্ব ঘোষণা মতো নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়িতে যায় দুই সদ্যসের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন, প্রিয়াঙ্ক কানুনগো ও রূপালি ব্যানার্জী। আর সেখানেই দেখেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়ের নেতৃত্বে চলে এসেছে রাজ্য প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় দল অভিযোগ করেন তাদেরকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাধা দিচ্ছে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। প্রায় দু’ঘণ্টা তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে। কেন্দ্রীয় দলকে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দিতে হবে এই দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে গ্রামবাসীরা। সামিল হয় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব গাজলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন ও ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজনীতি করছে এই অভিযোগ তুলে বেশ কিছুক্ষণ পর গ্রাম থেকে চলে যান রাজ্যের প্রতিনিধি দল। কিছুক্ষণের মধ্যেই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকারের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে আর এরপরেই তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। কোনওরকমে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয় ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ও বিজেপি বিধায়ক মিত্র চৌধুরী ও গাজলের বিজেপি বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন। তারপর হামলা চালিয়েছে বিজেপি অভিযোগ সাগরিকা সরকার।
গোটা ঘটনায় একদিকে চরম দুঃখিত লাঞ্চিত ও অপমানিত নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, আমি আমার মেয়ের বিচার চাই। কোনও রাজনীতি চাই না। এতদিন কোথায় ছিলেন সবাই। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সুদেষ্ণা রায় বলেন, আমি শিশুটির কথা ভেবে বেরিয়ে যাচ্ছি। একটি শিশু সকাল থেকে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে। আমরা যখন এখানে আসি তখন কেউ ছিল না। ওরা জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে তারা অবশ্যই নিয়ে এসেছেন। একজন এমএলএকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যান। আমার অভিযোগ আমাকে যদি ঢুকতে না দেন তাহলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে ঢুকতে কেন দিচ্ছেন। আমি তো ওনার সিস্টার অরগানাইজেশন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে একসঙ্গে সহযোগিতা করে কাজ করতে। আমি তাদের সহযোগিতা করতে এসেছি। তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে স্লোগান তুলছে। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি কারণ আমি মায়ের কথা ভাবছি শিশুর কথা ভাবছি। মানবিকতার খাতিরে আমি বেরিয়ে গেছি। তিলজলা থেকে মালদা ওরা এটা করছে। ইতিমধ্যেই আমি ঘটনায় অভিযোগ জানিয়েছি মহিলা কমিশনে, সিপিকে তার পুলিশ কমিশনারকে। তিলজলা থানায় অভিযোগ জানিয়েছে যে আমার সঙ্গে উনি অভব্য ব্যবহার করছেন। নিগৃহীত করেছেন। ßুñলে সেদিন যে শিক্ষক ছিলেন না তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা দরকার আছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। অন্যদিকে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি প্রিয়াঙ্ক কানুনগো বলেন, নিজেই তার মা জানিয়েছেন এই ঘটনার কিছু মানুষ ভিডিও রেকর্ডিং করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও ধারায় মামলা করা হয়নি। এরা বলছে একটা মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু এখানকার প্রশাসন এখনো জানায়নি কতগুলি মোবাইলে এই ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ নীরব। এ বিষয়ে কোনো এফআইআরও করা হয়নি। এখানকার পুলিশদের ট্রেনিং এর অভাব রয়েছে। বাচ্চাদের সুরক্ষার ব্যাপারে এখানকার পুলিশ উদাসীন। এখানকার মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করব যে উনি একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী বাচ্চাদের অবস্থা বোঝার জন্য। এই সমস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করুন। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার কোনও প্রয়োজন নেই। আমি নিজেই তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি এ বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করব। জেলা পরিষদ সদস্য সাগরিকা সরকার বলেন,এখানে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন এখানে রিপোর্ট নিতে। সেখানে বিজেপির নেতৃত্ব যারা আছেন তারা তাদের বাধা দেন। বিজেপির যে মহিলা মোর্চার ছিলেন তারা আমাকে আক্রমণ করে। জাতীয় কমিশন দেখা করুক কিন্তু সেখানে বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ঘরে ঢুকেছেন। এই ঘটনাকে আমি তীব্র ধিক্কার জানাই। যদি কেউ আমাকে আক্রমণ করতে আসে তাহলে আমি কি তাকে ছেড়ে কথা বলব। বিজেপি আমাকে মারতে আসবে আমি কি চুরি পরে বসে থাকব।