মহেশ্বর চক্রবর্তী
হুগলি জেলার প্রত্যন্ত একটি জনপদ হল গোঘাটের খাটুল। এই খাটুলেই চৌধুরী পরিবারে বাস। জেলার বনেদিবািড়র দুর্গা পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম হল গোঘাটের খাটুলের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো। এই বছর তাদের পুজো প্রায় ৩৫০ বছরে পদার্পণ করে। চৌধুরী বাড়ির দুর্গা পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। চৌধুরী পরিবারের দাবি, দেবী দুর্গা নাকি তাদের ছিল না। খাটুল জনপদের একবারে শেষ প্রান্তে দিঘির পাড়ে বোষ্টমদের বাস ছিল। এহ বোষ্টমরা প্রথমে দুর্গা পুজো করতেন। কিন্তু অবস্থার বিপাকে পড়ে মা দুর্গার আরাধনা বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে চৌধুরী পরিবারে দরিদ্র, জ্ঞানী সিদ্ধপুরুষ ও রামতনু বিদ্যালঙ্কার টোলে পড়াতেন এবং মা দুর্গার আরাধনা করতেন। এদিকে মা দুর্গার পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিন মা দুর্গা রামতনুকে স্বপ্নে বললেন, তাকে যেন বোষ্টমদের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু কি করবে দরিদ্র ব্রাহ্মণ্য। কিভাবে দেবী দুর্গার আরাধনা করবেন। সেই আর্তি দেবী দুর্গার কাছে করজোরে রাখেন জ্ঞানী পণ্ডিত ও দেবীর আশীর্বাদ ধন্য সন্তান রামতনু বিদ্যালঙ্কার। তারপরই দেবী দুর্গার আদেশে পুঁইশাক, বড়ি পোস্ত, বড়ির টক ও খিচুড়ি দিয়ে চৌধুরী বাড়িতে মা দুর্গার প্রতিষ্ঠা করেন। নিরামিষ অন্নভোগ মাধ্যমে খাটুলের চৌধুরী বাড়িতে মা দুর্গার আরাধনা শুরু হয় দালান বাড়িতে। ™াশেই প্রতিষ্ঠিত হয় কুলদেবতা গোপিনাথ জিউ, রাধিকা, গোপাল জিউ, গোবর্ধনধারী সীতারাম রঘুনাথ গিরিধারীর মন্দির। দুর্গা দালান সংলগ্ন স্থানে দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দির ও পাশে বেলগাছ। দু’শো বছরের বেল গাছ না থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের হাতে প্রতিষ্ঠিত বিরাট বেল গাছ রয়েছে। এই পরিবারে সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য নিমাই চাঁদ চৌধুরী বলেন, সামর্থ্য আমাদের ছিল না। বোষ্টমদের ঠাকুর ছিল। রামতনু তর্কালঙ্কার টোলে পড়াতেন। মা দুর্গার তিনি স্বপ্নাদেশ পান। তাঁর আদেশেই পুজো প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরদিকে বর্তমান পুজোর পুরোহিত তথা চৌধুরী বাড়ির সদস্য নিরাপদ চৌধুরী বলেন, স্বাতিক ভাবে পুজো হয়। শিব মন্দির সংলগ্ন প্রাচীন বেল গাছ তলাতেই বেল বরন হয়। প্রতিপদ থেকেই খিচুড়ি ভোগ ও পুইশাক, বড়ি পোস্ত ও বড়ির টক দেওয়া হয়। পুজোর সময় অন্নভোগ দেওয়া হয়। তবে পুরো নিরামিষ ভোগ রান্না হয়। ছাগ বলি হয় না। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে এই প্রথা চলে আসছে। পাশাপাশি নিত্যানন্দ চৌধুরী বলেন, মহালয়ার পরদিন ঘট ওঠে। পরিবারের কুল বধুরা এই পুজোয় অংশ নেন। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বিশিষ্ট মানুষ রাজ নারায়ণ চৌধুরী বলেন, আমরা গর্বিত এই পরিবারের জন্য। আমাদের পুজো আরম্ভর ভাবে হয় না। ভক্তি ভাবে মায়ের আরাধনা হয়। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। মায়ের আশীর্বাদে দরিদ্র ব্রাহ্মণ্য পরিবারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বর্তমানে কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও পুজোর সময় সবাই আসেন এবং এক সঙ্গে আমরা ভক্তি ভরে মায়ের পুজোপাঠ করি। সবমিলিয়ে বনেদিবাড়ির পুজো হিসাবে গোঘাটের খাটুলের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো বেশ জনপ্রিয়।