মহেশ্বর চক্রবর্তী
হুগলি জেলার বনেদি বাড়ি ও সাবেকিয়ানা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল গোঘাটের (Goghat) বদনগঞ্জ পূর্বপাড়া মুখার্জি(Mukjherjee) বাড়ির দুর্গা পুজো। এই বছর তাদের এই পুজো ৫৫২ বছরের পদার্পণ করল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরের মতো এই বছরও রীতি ও নিষ্ঠার সঙ্গে মুখার্জি বাড়ির পুজোপাঠ হচ্ছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, এই পরিবারটি কোনও বংশপরম্পরায় জমিদারি ভোগ করত না। কিন্তু মধ্যসত্ত্বভোগী ছিল বলে জানা গেছে। সে সব এখন অতীত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে মা দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে এক অলৌকিক ঘটনা আজও এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। আজও এই প্রাচীন সাবেকিয়নার রীতি মেনে আম দিয়ে শোল মাছের টক দেওয়া থেকে শুরু করে চ্যাং মাছের ঝোল করে মাকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়। মুখার্জি পরিবার সুত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক দিন মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী আজও ভোগ রান্না করে পুজোর চারটে দিন খাওয়ানো হয়। মুখার্জি পরিবারের এক প্রবীণ সদস্যর দাবি, ৫৫২ বছর আগে এক কল্পনাতীত ঘটনা ঘটেছিল এই দরিদ্র মুখার্জি পরিবারে। নিঃসন্তান অবস্থায় মুখার্জি পরিবারে এক দম্পতি বাস করতেন। বয়স ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের সন্তান হয়নি। তবে তারা মা দুর্গার ভক্ত ছিলেন। ধর্মপ্রাণ এই বৃদ্ধ দম্পতি ভগবানের নাম গান করেই বেঁচে থাকতেন। একদিন সন্ধিপুরের সরকার বাড়ির মা দুর্গার অন্ন ভোগ খেতে ইচ্ছা করে। সেখান থেকে মা দুর্গা বাগদি মেয়ের রূপ ধরে দুর্গা পুজোর সমস্ত জিনিস ও অন্নভোগের দ্রব্য সহ স্ব-শরীরের দরিদ্র মুখার্জি বাড়িতে হাজির হন। কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতি তাকে মেয়ের মতো করে আপন করে নেয় এবং তাকে জানায়, পুজো হলেও আগামী বছর বা তারপর কিভাবে মায়ের আরাধনা হবে। তারা তো নিঃসন্তান। এই কথা শুনে মা দুর্গার আশীর্বাদে ৭০ বছরে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। নাম দেওয়া হয় গৌরি শঙ্কর মুখার্জি। সেই থেকেই পুজো শুরু হয়। এমনটাই জানান ওই বংশের প্রবীণ সদস্যরা। সবমিলিয়ে গোঘাটের বদনগঞ্জের মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি বেশ চোখে পড়ার মতো।