চিত্ত মাহাতো
স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিজের চাষের ৫ কাটা জমি লিখে দিয়েছিলেন। এরপরেই ডাইনি (witch) অপবাদ দিয়ে বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে এবং বউমা। গত চার মাস ধরে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই বৃদ্ধকে। বাড়ি ফিরতে চাইলেই জুটছে মারধর। ‘আদিবাসী সেন্টিমেন্ট’ নিয়ে দ্বিধায় পুলিশও। ফলে বৃদ্ধের ঠাঁই হয়েছে রাস্তায়। মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। ডাইনি অপবাদ আর প্রাণনাশের হুমকি নিয়ে বিতাড়িত ওই বৃদ্ধ পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষে করছেন। রাত কাটাচ্ছেন ডেবরা বাজারের ওপর দিয়ে যাওয়া হাওড়া-মুম্বই জাতীয় সড়কের আন্ডার পাশের নীচে। জানা যায়, গৃহস্থ পরিবারের সদস্য তিনি। বাড়ি ডেবরা ব্লকের সত্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বৃন্দাবনচক এলাকায়। নাম দুখুরাম টুডু। ৬৭ বছর বয়সি বৃদ্ধ জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে তাঁর এক ছেলের অসুখ হওয়ায় শারীরিক অবনতি হয়, চিকিৎসা করিয়েও আশানুরূপ ভাবে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় কুসংস্কারে আছন্ন গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয় তাঁর ওপর। অন্ধ বিশ্বাসে গ্রামবাসীরা তাঁকে ডাইনি অপবাদ দেয়। বলা হয়, তার কুনজর পড়ায় ছেলে সুস্থ হতে পারছে না। তিনি গ্রামে থাকলে আরও অনেক মানুষের বিপদ বা জীবনহানি হতে পারে, তাই গ্রাম ছাড়ার নিদান দেওয়া হয়। হঠাৎ ছেলের অসুস্থতার জন্য তাঁকে দায়ী করা হচ্ছে কেন আর ছেলেই বা তাতে সায় দিচ্ছে কেন তিনি তা প্রথমে বুঝতে পারেননি। প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে সোজা ডেবরা পুলিশের দ্বারস্থ হন দুখুরাম। অভিযোগ পাওয়ার পরেই ডেবরা প্রশাসন থেকে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে বৃদ্ধকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই ফের বৃদ্ধের উপর চড়াও হন কিছু মানুষ। বারবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। পুলিশ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসার কিছুক্ষণ পরেই বৃদ্ধ আন্ডার পাশে ফিরে আসে। এরপর বৃদ্ধ জানতে পারে তিনি তাঁর অসহায় মেয়েকে জমি লিখে দেওয়ার কারণেই ছেলে-বউমা গ্রামেরই কিছু মাতব্বরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এই কাজ করছে। মাস খানেক আগে ফের বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছিলেন বৃদ্ধ, কিন্তু এবার ছেলে-বউমা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় বাড়িতে থাকলে রাতের অন্ধকারে খুন করে দেবে। তারপর আর গ্রামে থাকার সাহস পাননি বৃদ্ধ। ঠাঁই নিয়েছেন জাতীয় সড়কের আন্ডার পাশে।