‘ডিসকভারি’-র প্রতিযোগিতা জিতে ‘নাসা’ যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কলকাতার নীলার্ক

কলকাতা: সূর্য কখন ওঠে? চাঁদটা আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছে না কেন ? তারাগুলো মিটমিট করছে কেন? ছোট্ট থেকেই হাজারও প্রশ্ন নীলার্কর। জিজ্ঞাসা থেকেই এনসাইক্লোপিডিয়া খুলে বসা। নীহারকিা, ছায়াপথ, গ্রহ, উপগ্রহের রকমারি ছবি খুদে মনে জাগিয়ে তুলেছিল কৌতূহল। তারওপর বাবার দেওয়া ছোট্ট টেলিস্কোপে চোখ রাখতেই আকাশ তার মনে জাগিয়েছিল এক আকাশ জিজ্ঞাসা।
সেই জিজ্ঞাসা, কৌতূহল, জানার প্রতি আগ্রহের জোরে ডিসকভারি চ্যানেল আয়োজিত ডিসকভারি স্কুল সুপার লিগ সিজন থ্রি-তে  (discovery school super league season 3)পশ্চিমবঙ্গ থেকে জয়ী হয়েছে নীলার্ক পাহাড়ি ও তাদের টিম। বিজয়ী হওয়ার সুবাদেই স্বপ্নের সংস্থা ‘নাসা’ -য় পাড়ি দিতে চলেছে কলকাতার ইয়ং হরাইজনস স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া নীলার্ক (Nilarka Pahari), বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল স্কুলের অর্কদেব মান্না ও হলদিয়ার ভবনস নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস বিদ্যানিকেতনের বৈভব সাহু।
কলকাতার কালীকাপুরে বাবা-মা, ভাইয়ের সঙ্গে থাকে নীলার্ক। তাঁর বাবা রমাপদ পাহাড়ি সাংবাদিক, মা নীলাঞ্জনা মাইতি নার্সিংয়ের শিক্ষিকা। রমাপদ পাহাড়ি বললেন, ‘ছোট থেকেই ছেলের আকাশ নিয়ে জিজ্ঞাসা। শুধু তাই নয়, ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে সমস্ত জিনিস ফেলে দিয়ে ও গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স বোঝার চেষ্টা করত।’

বিজ্ঞানের প্রতি নীলার্কর অদম্য কৌতূহল। রকেট নিয়ে আগ্রহ। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দেখার ছাড়পত্র পাওয়ার আশায়, ছোট থেকেই একাধিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে সে। ২০২১ সালে ডিসকভারি স্কুল সুপার লিগ সিজন থ্রি-তে অংশ নিয়েছিল সে। তাঁর বাবা জানালেন, প্রতিযোগিতায় দেশজুড়ে ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ২৩ লক্ষের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। ছ’টি লেভেলের পর নীলার্করা পায় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। সম্প্রতি বের হয়েছে প্রতিযোগিতার রেজাল্ট। মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, বিহার, রাজস্থান-সহ বিভিন্ন রাজ্যকে পিছনে ফেলে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ওয়ান্ডার্স’ উঠে আসে শীর্ষস্থানে। আর সেই সুবাদেই নিখরচায় নাসা যাওয়া ও সেখানে গিয়ে তাদের বিভিন্ন সেন্টার ঘোরার, বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতে-কলমে দেখার ও বোঝার সুযোগ পাবে নীলার্ক ও তাদের দলের আরও পড়ুয়া। নীলার্কর স্কুলের একজন শিক্ষকও সেই সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যেই অবশ্য একাধিক পুরস্কার সহ ৫ লক্ষ নগদ পুরস্কার পেয়েছে তাদের টিম।
তবে শুধু মহাকাশ নয়, লেখালেখিতেও আগ্রহ আছে তার। নীলার্কর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব ছোট্ট বেলায় গল্পলেখায় তার হাতেখড়ি। গল্পের চরিত্ররা বেশিরভাগ সময়ই ভিন গ্রহের জীব। ইতিমধ্যে তার লেখা কয়েকটি গল্প পুরস্কার পেয়েছে।
ইতিমধ্যেই অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছে নীলার্ক। ইন্ডিয়ান স্পেস সায়েন্স অলিম্পিয়াডে পেয়েছে প্রথম স্থান। ইন্টারন্যাশনাল এরোস্পেস অলিম্পিয়াডেও প্রথম। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড অফ স্টেম অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রথম। সেইসঙ্গে স্কাউট অ্যান্ড গাইডস-এর সদস্য সে। পড়াশোনার পাশাপাশি তার অবসরের সঙ্গী ছোট ভাই। দুই ভাই মিলে রকেট-সহ রকমারি পরীক্ষা নিরীক্ষায় মেতে থাকে।
নাসা যাওয়া নিয়ে কতটা উত্তেজিত নীলার্ক? সে জানাল, ‘স্বাভাবিকভাবে, নাসা যাওয়ার জন্য মন ছটফট করছে, সেইসঙ্গে নানা ধরনের অলিম্পিয়াডের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল জুনিয়ার সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার লক্ষ্য, উচ্চমাধ্যমিকের মধ্যে অন্তত তিন বার নাসা, জাক্সা, রসকসমসের মতো আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় বিনা খরচে যাওয়ার ছাড়পত্র অর্জন করা। তবে ভবিষ্যতে কিন্তু, নাসা বা অন্য কোনো বিদেশি সংস্থা নয়, আমাদের দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোতেই গর্বের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ’

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 − four =