বুবুন মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: সঞ্জয় মালিক নামের এক ব্যবসায়ীকে হরিয়ানা থেকে গ্রেপ্তার করল রাজ্য পুলিশের সিআইডি (CID)। তাকে মঙ্গলবার আসানসোল আদালতে তোলা হয়। কয়লা পাচার কাণ্ডে দিন কয়েক আগেই কলকাতা থেকে আধুল বারিক বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি গোয়েন্দারা। সেই বারিক বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে এই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিআইডি সূত্রে খবর।
জানা গিয়েছে, রবিবার হরিয়ানার বাহামগড় থানার কামারপুরে একটি ফার্মহাউসে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ী সঞ্জয় মালিককে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি অফিসাররা। সূত্রের খবর, বারিক বিশ্বাস গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই দিল্লির প্রীতমপুরার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সঞ্জয় মালিক গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গ্রেপ্তারের পর হরিয়ানার একটি আদালতে তুলে দু’দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে সঞ্জয় মালিককে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে কলকাতা থেকে আসানসোল আদালতে তোলা হয়। সিআইডি সঞ্জয়কে ১২ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে চাওয়ার আবেদন করে।
সিআইডি সূত্রে খবর, আসানসোলে বিভিন্ন খনি থেকে অবৈধভাবে কয়লা পাচারের সঙ্গে যোগ আছে ধৃত ব্যবসায়ীর।
সিআইডির দাবি, বারাবনি থানায় ২০১৯ সালের বেআইনি কয়লা চুরির সঙ্গে এরা যুক্ত রয়েছে। তাই তাদেরকে হেপাজতে নিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে। সিআইডি’র তরফে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বারাবনির চরণপুর এলাকা থেকে ১৮১৭ মেট্রিক টন চোরাই কয়লা ইসিএলের অভিযোগের ভিত্তিতে বারাবনি পুলিশ আটক করেছিল। এই কয়লা তখন রেলের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই খবর পেয়ে ইসিএল আধিকারিকরা সেখানে পৌঁছন। কোনও কাগজপত্র না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেই কয়লাগুলি তারা উদ্ধারের জন্য বারাবনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ইসিএলের অভিযোগের ভিত্তিতে বারাবনি থানার পুলিশ একটি মামলা (নম্বর ১২৭) করে।
ব্যবসায়ীর আইনজীবী শেষাদ্রী দুবে সওয়াল করে বলেন, ২০১৯ সালের বারাবনি থানার ওই মামলায় যে এফআইআর করা হয়েছে তাতে আমার মক্কেলের নাম ছিল না। আর কয়লা তো পাচার করা হয়নি। তাহলে হেপাজতে নেওয়ার কি দরকার। তাকে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু সরকারী আইনজীবী মনোজ সিং, সেই জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আগে যে ৫ জনকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করা হয়েছে, তাদের কাছে যে সূত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে পরিষ্কার যে এই ব্যবসায়ী ওই কয়লা পাচারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিআইডির হেপাজতে নেওয়ার আবেদনের ভিত্তিতে আসানসোল আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক (সিজিএম) অর্পিত বন্দোপাধ্যায় সঞ্জয় মালিকের জামিন নাকচ করে ১২ দিনের সিআইডি হেপাজতের নির্দেশ দেন। তাকে এদিন আসানসোল থেকে সিআইডি কলকাতায় নিয়ে চলে যায়। সিআইডি ধৃত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৯, ৪১১, ৪১২, ৪১৩, ৪২০ ও ১২০/বি নম্বর ধারায় মামলা করেছে।
সিআইডি একইসঙ্গে জামুড়িয়া ও বারাবনি থানার দুটি কয়লা পাচারের মামলার তদন্ত করছে। বারাবনি থানার এই মামলার তদন্ত করতে নেমে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের ধারণা, ধৃত ব্যবসায়ী আসানসোলের বিভিন্ন খনি এলাকা থেকে কয়লা তুলে রেলের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করতো। সেক্ষেত্রে ভুয়ো চালান ব্যবহার করা হত। জানা গিয়েছে, যে বা যারা রেলে কয়লা পরিবহণের দায়িত্বে ছিলেন তাদের প্রয়োজন হলে সিআইডি ডেকে জেরা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, কয়লা পাচার ও চুরির মামলায় সিবিআইয়ের পাশাপাশি সিআইডি তদন্ত করতে নেমেছে। তাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলার সঙ্গে গোটা রাজ্যে আলোড়ন পড়েছে।