‘এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না…’, চিরঘুমে সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র, শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

কলকাতা: ‘এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না…’, ‘ও তোতা পাখি রে…’ নির্মলা মিশ্রের কণ্ঠে এই গানগুলি ছিল বিগ হিট। প্রখ্যাত সেই সঙ্গীত শিল্পী চলে গেলেন চিরঘুমে। শনিবার গভীর রাতে নিজের চেতলার বাড়িতেই প্রয়াত হন  সঙ্গীতশিল্পী। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অবশেষে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। ২০১৫ সালে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন নির্মলা মিশ্র। একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হন। গত এক মাস কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল শিল্পীর। হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছিলেন না। টিউবের সাহায্যে খাওয়ানো হচ্ছিল প্রবীণ শিল্পীকে।শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘তিনি (নির্মলা মিশ্র)পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির উপদেষ্টা পরিষদ ও বাংলা সঙ্গীতমেলা কমিটির কার্যকরী সমিতির সদস্যা ছিলেন।পশ্চিমবঙ্গ  সরকার তাঁকে ২০১২ সালে ‘সঙ্গীতসম্মান’ এবং ২০১৩ সালে  ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’ ও ‘বঙ্গবিভূষণ’  সম্মাননা প্রদান করে।নির্মলা মিশ্রের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের নিবিড়  সম্পর্ক ছিল।তাঁর প্রয়াণে সঙ্গীত জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।আমি নির্মলা মিশ্রের পরিবার-পরিজন ও  অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন ছেলে শভদীপ।স্ত্রীকে নিয়ে যাদবপুরে থাকেন তিনি। বাবা-মা থাকতেন চেতলায়। ছেলে শুধু মায়ের স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁর মা শান্ত গম্ভীর ছিলেন না। বরং ছিলেন ছটফটে। চুপ করে থাকতে পারতেন না। সবসময় কাজ করতেন। তিনি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে হাত চেপে ধরতেন। বলতেন, কোথায় যেতে হবে না।সঙ্গীতশিল্পীর রান্নাতেও ছিল জাদু। বলছেন তাঁর ছেলেও।চকলেট, আইসক্রিম খেতে খুব ভালোবাসতেন।সঙ্গীতশিল্পী হলেও গলার কথা না ভেবে ঠান্ডা জল খেয়ে ফেলতেন।

নির্মলা মিশ্র গত কয়েক বছর ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন।তবে আচমকা চলে যাবেন তিনি, মানতে পারছেন না ছেলে ও স্বামী।বাংলা আধুনিক গানেক জগতে নির্মলা মিশ্র বরাবরই ছিলেন জনপ্রিয়।’এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না’ অথবা ‘ও তোতা পাখিরে’, বাংলা আধুনিক গানের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় এই গানগুলিতে নির্মলা মিশ্রের অবদান চিরস্মরণীয়। ‘বলো তো আরশি তুমি’, ‘আমি তো তোমার হাসি কান্নার চিরদিনের সাথী’, ‘কাগজের ফুল বলে’- গানগুলি এখনও সমান জনপ্রিয়। ‘চাঁদকে নিভিয়ে রাখো’, ‘যায় রে এ কী বিরহে’, ‘সুখ যে আমার’, ‘তোমার আকাশ দু’টি চোখে’, ‘আজ কোনও কাজ নেই’, ‘ও আমার মন পাখি’, ‘আমায় বাঁশের বাঁশি দাও বাজাতে’, ‘আকাশে নেই তারার দীপ’- এই গানগুলিও মনে রাখার মতো।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে রবীন্দ্র সদনে রবিবার, ৩১শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১টা থেকে প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাদার্ন অ্যাভিনিউতে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে শায়িত রয়েছে প্রয়াত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী নির্মলা মিশ্র-এর মরদেহ। এখান থেকে সকাল তাঁর দেহ প্রথমে চেতলার বাসভবনে, তারপর রবীন্দ্র সদন, তারপর রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। নির্মলা মিশ্র-এর ছেলে শুভদীপ দাশগুপ্ত হাসপাতালে এসেছেন। রাজ্য সরকার প্রয়াত শিল্পীর শেষকৃত্যের সমস্ত আয়োজন করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × four =