অনিয়মের অভিযোগে স্বাস্থ্য দপ্তরের কড়া পদক্ষেপ, বন্ধ হল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল 

দুর্গাপুর: কাঁকসা থানার বামুনারা এলাকায় একটি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের। স্বাস্থ্য দপ্তর চলতি মাসের মধ্যেই চিকিৎসারত রোগী সহ হাসপাতালের সমস্ত জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একাধিক আবাসনের পার্শ্ববর্তী একটি আবাসনে থাকা ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আবাসিকদের একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে বলে জানা গিয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে হাসপাতালের লাইসেন্স সংক্রান্ত নথির মধ্যে কিছু অসঙ্গতি স্বাস্থ্যদপ্তরের নজরে পড়ে। এছাড়াও হাসপাতালের সিইও অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টের লাইসেন্স নবীকরণের ক্ষেত্রেও যথাযোগ্য নথি পেশ করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপরেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই হাসপাতালটি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। সেই বিজ্ঞপ্তি স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই আধিকারিক দ্বারা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, বামুনারা এলাকার একটি ১২ তলা আবাসনের একতলা ও দোতলা জুড়ে রয়েছে এই হাসপাতালটি। আবাসনের বাকি অংশে আবাসিকরা বসবাস করেন। এমন জনবহুল একটি পরিবেশে হাসপাতাল চলতে থাকায় ওই আবাসিকদের পাশাপাশি হাসপাতাল সংলগ্ন অন্যান্য আবাসনের আাবাসিকরা ভুগছিলেন নানা রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায়। কারণ করোনাকালে এই হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চলেছে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। এছাড়াও এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি আবাসনের মধ্যে এই হাসপাতাল চলার কারণে তাঁরা নিত্যদিন নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। অতিমারিকালে যত্রতত্র পিপিই কিট পড়ে থাকা সহ রোগীদের ব্যবহৃত নানান সামগ্রী নিত্যদিন পড়ে থাকে এলাকা জুড়ে। অন্যদিকে আবাসনের সামনেই হাসপাতালের মর্গ থাকায় সারাদিন মৃতদেহ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন তাঁরা। এছাড়াও আবাসনের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচিল তুলে দেওয়ায় ফায়ারের গাড়ি ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সবমিলিয়ে এই অস্বস্তিকর পরিবেশে এক কথায় হাঁপিয়ে উঠেছিলেন এলাকাবাসী বলে অভিযোগ। হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশিকা জারি হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে আবাসিকদের।
এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনুস জানান, গতবার যখন সুপার স্পেশ্যালিটি এই ক্লিনিকাল হাসপাতালের লাইসেন্স তৈরি করা হয়েছিল তখন যে নথি দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের সময় দেওয়া নথির কোনও মিল পাওয়া যায়নি। যতক্ষণ না পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈধ নথি জমা দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত ওই হাসপাতালের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হবে না। তাই হাসপাতাল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এই ধরনের আরও অনেক বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুরে একাধিক হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন ভুরিভুরি অভিযোগ উঠছে একাধিকবার।
প্রায়শই শোনা যায় গাফিলতির অভিযোগ। তবে কড়া হাতে তা দমনের উদাহরণ খুব বেশি নেই। তাই বামুনাড়া এলাকার এই বেসরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে এক নজির গড়ল স্বাস্থ্য দপ্তর। এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন তোলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − five =