যাদবপুর: অস্বাভাবিক মৃত্যু হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য সামন্তক দাসের। অকালে চলে গেলেন জনপ্রিয় এই অধ্যাপক। বুধবার দুপুরে ওঁর রানিকুঠির বাড়ি থেকে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায় পুলিশ। বয়স হয়েছিল প্রায় ৫৭ বছর। রেখে গিয়েছেন স্ত্রী, তিন সন্তান এবং অসংখ্য গুণমুগ্ধকে। সূত্রের খবর তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সামন্তকের গুণমুগ্ধ তিয়াষ দাস ফেসবুকে লিখেছেন, সামন্তকদা… সুইসাইড! এটাও শোনার ছিল! এটাও! যাদবপুর যতটা, যেটুকু পড়াশোনা …সামন্তকদা একটা টুকরো ছিলেন। সম্ভবত প্রথম টুকরো। এটুকুই… । দুঃস্বপ্নেরও বাইরে যেন সবটা। জানা গিয়েছে, এদিন সকালে প্রতিদিনের মতো সামন্তক দাসের রানিকুঠির বাড়িতে যায় গাড়ি। কিন্তু তাঁকে ডাকাডাকি করেও কোনও সাড়া মেলেনি। তারপরেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। ক্যারাটের বেল্ট তাঁর গলায় প্যাঁচানো ছিল বলে খবর সূত্র মারফত। এই ঘটনায় শোক নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য সামন্তক দাস তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। পড়াতেন বাংলা বিভাগেও। সার্বিকভাবে ক্যাম্পাসে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর ক্লাস করতে ভালবাসতেন। তিনি যখন ক্লাস নিতেন, অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও সেই ক্লাসে চলে আসতেন শুধুমাত্র তাঁর কথা শোনার জন্য। সামন্তক দাসের এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ যাদবপুর।
লা মার্টস এবং সেন্ট জেভিয়ার্সের এই কৃতী প্রাক্তনী প্রথমে ছিলেন কলকাতার একটি নামী ইংরেজি দৈনিকের সাংবাদিক। পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যান। পড়াতেন ইংরেজি। বছর কয়েক আগে আসেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী বিশিষ্ট শিল্পী রঞ্জাবতী সরকারও অস্বাভাবিকভাবে মারা যান। তাঁরা একটি শিশু দত্তক নেন। পরে সামন্তক বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি কন্যা হয়। সামন্তক দাসের দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, একটি ইংরেজি দৈনিকের রেসিডেন্ট এডিটর তরুণ গোস্বামী বলেন, মন একেবারে ভেঙে গেছে। প্রতিদিনের মতো ওকে আমাদের পত্রিকার পিডিএফ পাঠাই। ও নমস্কারের প্রতীকে উত্তর দেয়। স্ত্রী যখন আত্মহননের পথ বেছে নেয়, বাচ্চাগুলো তখন ছোট। সামন্তক ওদের মা বাবা হয়ে উঠেছিল। দরজা না খোলায় প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। দরজা ভেঙে ঘরের ফ্যানে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। বুধবার দরজা না খোলায় প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। দরজা ভেঙে ঘরের ফ্যানে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
তরুণের কথায়, সামন্তক খুব পণ্ডিত মানুষ ছিল। সেদিন ফোন রাসেলের ‘সাটান ইন দি সাবার্বস’ নিয়ে অনেক কথা হল। নানা বিষয় গল্প করতাম আমরা। আমার ছেলেকে ও খুব পছন্দ করত। ওর কাজ কেমন হচ্ছে জানতে চাইত। বলত দেশে ফিরলে ওর সঙ্গে আলোচনা করব। মানুষের মনে কী হয় কে জানে? ভালো থাকিস। আর কাগজ পাঠাতে হবে না। খুব খারাপ লাগছে। চোখের জল বাঁধ মানছে না। উইটগেনস্টাইন, রাসেল আর স্বামীজিকে নিয়ে আলোচনা হবে না।