বুবুন মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: জামুড়িয়ায় একটি গাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল জামুরিয়া থানার পুলিশ। এবার সেই ঘটনায় বেআইনি কয়লা কারবারের যোগ পেল রাজ্য পুলিশের সিআইডি। আর সেই কয়লার কারবার হত ইসিএল থেকে কয়লা নেওয়ার ডিও বা ডেলিভারি অর্ডারের মাধ্যমে। এর পেছনে আর কারা কারা আছে, তা জানতে তৎপর হয়েছে সিআইডি।
মঙ্গলবার এই ঘটনার তদন্তে নেমে আসানসোল জেলে থাকা চার কয়লা কারবারি ওমপ্রকাশ আগরওয়াল, যুধিষ্ঠির ঘোষ, অভিনব সিং ও বিজয় সিংকে নিজেদের হেপাজতে নেয় সিআইডি।
কলকাতার ভবানী ভবন থেকে আসা সিআইডির অফিসাররা এই চারজনকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতে নেওয়ার আবেদন করেন আসানসোল আদালতে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক ১০ দিনের সিআইডি হেপাজত মঞ্জুর করেন। অভিযুক্ত চারজনকে কলকাতায় নিয়ে চলে যান সিআইডির অফিসাররা।
গত, ১ জুলাই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে জামুড়িয়া থানার পুলিশ জামুড়িয়ার হুড়মাডাঙা এলাকায় অভিযান চালায়। তাতে পুলিশ ৯০ টন স্টিম কোল পায়। সেখানে একটি গাড়ি পায় পুলিশ। সেই গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। গ্রেপ্তার করা হয় মীর রাজা ওরফে মীর দিলওয়ার নামে একজনকে। এছাড়াও পুলিশ সেখানে একটি ডিপোর হদিশ পায়। সেই ডিপোতে বেআইনি কয়লা মজুত করতো কয়লা কারবারিরা। পরে সেই কয়লা পুড়িয়ে স্টিম কোল করা হত। ধৃতকে হেপাজতে নিয়ে জেরা করে পুলিশ জামুড়িয়ার বাসিন্দা জয়ন্ত মণ্ডলের নাম জানতে পারে। এরপর গত ৫ জুলাই রাতে জয়ন্ত মণ্ডলের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। জয়ন্ত মণ্ডলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার বাড়ির গ্যারাজে পুলিশ একটি বিলাসবহুল গাড়ি পায়। তল্লাশিতে সেই গাড়িতে থাকা চারটি ব্যাগ থেকে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে ২ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। পুলিশ জানতে পারে এই গাড়ি জয়ন্ত মণ্ডলের নয়। গাড়ির মালিক রানিগঞ্জের বাসিন্দা। জয়ন্ত মণ্ডলের পাশাপাশি সেই গাড়ির মালিক বেপাত্তা। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে আরও জানতে পারে, এই টাকা সিন্ডিকেটের। এরপরই এর তদন্তের ভার দেওয়া হয় রাজ্য পুলিশের সিআইডিকে। সিআইডি গত কয়েক দিন ধরে তদন্তে নেমে আসানসোল জেলে বন্দি ওমপ্রকাশ আগরওয়াল, যুধিষ্ঠির ঘোষ, অভিনব সিং ও বিজয় সিংয়ের কথা জানতে পারে। তখনই এদেরকে হেপাজতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, ডিও বা ডেলিভারি অর্ডার দিয়েই ইসিএলের কয়লাখনি থেকে বেআইনি কয়লা পাচার করা হত। যে পরিমাণ কয়লা ডিওতে লেখা থাকত, তা ট্রাক ও ডাম্পারে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কয়লা কারবারিরা একটা সিন্ডিকেট করে সেই ডিওর মাধ্যমে বেআইনিভাবে কয়লা কোলিয়ারি থেকে বার করে নিত। পরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ত। সিআইডির অফিসাররা মনে করছেন, এর পেছনে ইসিএলের কর্মী, অফিসার থেকে সিআইএসএফ ও নিরাপত্তারক্ষীরাও আছেন। এর পেছনে ঠিক কারা রয়েছে এবং কাদের যোগসাজশে এটা চলছে, তা জানতে এই চারজনকে জেরা করতে হবে।
এদিকে, বেআইনি কয়লা কারবারে সিবিআইয়ের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের সিআইডির তৎপরতায় শিল্পাঞ্চল জুড়ে আলোড়ন পড়েছে।