বুবুন মুখোপাধ্যায়
যুবকদের চাকরি দেওয়ার নামে কেন্দ্র সরকার প্রতারণা করছে। মঙ্গলবার, আসানসোলে পোলো গ্রাউন্ডে জনসভায় কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে এই ভাবেই তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্র সরকার লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে না পারায় যুবসমাজকে ভুল বোঝাতে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পটি নিয়ে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পে চার মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সমস্ত অগ্নিবীর চার বছরের জন্য কাজে যোগ দেবেন, সেই চার বছর উত্তীর্ণ হয়ে গেলে ওই যুবকরা বেকার হয়ে পড়বেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মোট ৬০ হাজার অগ্নিবীর নিয়োগ করা হবে ধাপে ধাপে। অগ্নিবীরদের চার বছর চাকরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তাদেরকে অন্য কোনও কাজে নিয়োগ করার জন্য কেন্দ্র সরকার প্রত্যেকটি রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের দিকে নজর রেখে মানুষের মন ভোলানোর জন্য এই প্রকল্পটি নিয়ে এসেছে। লোকসভা ভোট পার হয়ে গেলে এই প্রকল্পের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার নিজের প্রচেষ্টাতে আগামী দিনে হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান করতে চলেছে। রানিগঞ্জে মাটির তলায় পৃথিবীর অন্যতম গ্যাস ভাণ্ডারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কলকাতায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সামিটে দু’টি সংস্থা কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছে। রানিগঞ্জে যে গ্যাস ভাণ্ডার আছে তা উত্তোলন করার জন্য গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জেটিক কর্পোরেশন লিমিটেড অর্থ বিনিয়োগ করতে চলেছে। আর ভূগর্ভস্থ গ্যাসের অনুসন্ধান করার জন্য অপর একটি সংস্থা বিনিয়োগ করতে চলেছে, এর ফলে কয়েক হাজার চাকরি সংস্থান হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অন্ডাল এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট করা হবে। বার্নপুরের সেল আইএসপি-র যে এয়ারস্টিপ রয়েছে, সেটা যদি তারা চালু করতে চায় তাহলে রাজ্য সরকার সমস্ত রকম সহযোগিতা করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের ভাষণে বলেন, বিজেপি ক্ষমতালোভী তাই মহারাষ্ট্রের সরকার ভেঙে নতুন সরকার গড়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচা করে বিধায়কদের অন্য রাজ্যে রেখেছে। বাংলাকে রেশম থেকে বঞ্চিত করছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র-রাজ্য কে গম দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, তবুও রাজ্য সরকার উন্নতমানের চাল জনগণকে বিনামূল্যে দিচ্ছে। এদিন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ চলাকালীন দর্শক আসনে বসে থাকা জনাকয়েক চাকরিপ্রার্থী প্ল্যাকার্ড নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবি করতে থাকে। অতর্কিতে এই ঘটনায় পুলিশ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও কয়েক মিনিটের মধ্যে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনার পর চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৭ হাজার চাকরি এই মুহূর্তে রাজ্যের হাতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু, বামপন্থী নেতা তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে মামলা করায় বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। তাই রাজ্য সরকারের কিছুই করার নেই। তিনি চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের উচিত যিনি চাকরি প্রার্থীদের হয়ে মামলা করেছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এদিন সভামঞ্চ থেকে সরকারি জমি বিভিন্ন সংস্থার সম্পর্কে খোঁজ খবর না নিয়ে, তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি আধিকারিকদের ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। মূলত, এদিনের সভাটি ছিল লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীকে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করানোর জন্য শিল্পাঞ্চলবাসীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন। এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, নবনির্বাচিত সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা ও তার স্ত্রী পুনম সিন্হা, রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা বারাবনির বিধায়ক তথা পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়, দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার, বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, এডিডি-এর ভাইস চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউরি, আসানসোল পৌর নিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিমুল হক। এদিনের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুল সুপ্রিয়কে কিছু গান গাইবার জন্য বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কথামতো বাবুল সুপ্রিয় রবীন্দ্র সংগীত ও একটি হিন্দি গান গেয়ে শোনান। শত্রুঘ্ন সিন্হা বলেন, ভোটের আগে বিজেপি নেতারা তাকে বহিরাগত বলেছিল, কিন্তু মানুষের আশীর্বাদে ব্যাপক ব্যবধানে জয়লাভ করার পর, তিনি যখন প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রায় দিনই আসানসোলে আসছেন, তা দেখে বিরোধীদের মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শত্রুঘ্ন সিন্হা তার ভাষণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।