বিদেশি নয়, বরং আইপিএলে এবার কোটিপতি ৮ ঘরের ছেলে !

আইপিএলের নিলাম মানেই এক সময় বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে হইচই। কে কত দামে উঠছেন, কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি শেষ পর্যন্ত বাজি ধরছে— এই উত্তেজনার কেন্দ্রে থাকতেন স্যাম কারেন, ক্রিস মরিস বা বেন স্টোকসদের মতো নামী বিদেশিরা। বিশেষ করে ছোট নিলামে নজর থাকত মূলত বিদেশি অলরাউন্ডারদের দিকেই। কিন্তু এ বারের আইপিএল নিলাম সেই চেনা ছবিটা অনেকটাই বদলে দিয়েছে।

হ্যাঁ, ক্যামেরন গ্রিনকে কিনতে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। বিদেশিদের পিছনে বড় অঙ্কের টাকা খরচের প্রবণতা যে একেবারে নেই, তা নয়। তবে নিলামের সার্বিক চিত্র বলছে, দলগুলোর দৃষ্টি এখন অনেক বেশি ঘরোয়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের দিকে। মঙ্গলবার আবু ধাবিতে হওয়া নিলামে মোট ৭৭ জন ক্রিকেটার বিক্রি হয়েছেন। তার মধ্যে ৩৯ জনই ঘরোয়া ভারতীয় ক্রিকেটার— যাঁদের অনেকেই এখনও রঞ্জি ট্রফিতে পর্যন্ত নিয়মিত খেলেননি, ভারতীয় দল তো দূরের কথা।

তবু এই ‘অনামী’ ক্রিকেটাররাই টেক্কা দিয়েছেন রঞ্জি খেলা বা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারদের। এ বারের নিলামে আট জন ঘরোয়া ক্রিকেটার কোটিপতি হয়েছেন। কার্তিক শর্মা ও প্রশান্ত বীর— দু’জনেই ১৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছেন। আকিব দার পেয়েছেন ৮ কোটি ৪০ লক্ষ, মঙ্গেল যাদব ৫ কোটি ২০ লক্ষ, তেজস্বী সিংহ ৩ কোটি, অক্ষত রঘুবংশী ২ কোটি ২০ লক্ষ, সলিল অরোরা ১ কোটি ৫০ লক্ষ এবং নমন তিওয়ারি ১ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি চমক দেখিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। এক সময় যাদের ‘ড্যাডিজ় আর্মি’ বলে কটাক্ষ করা হত, তারাই কার্তিক ও প্রশান্ত— এই দুই তরুণের জন্য একসঙ্গে ২৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। কেন এমন ঝুঁকি? চেন্নাইয়ের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট, এটা আসলে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। তাঁর কথায়, “ভাল ঘরোয়া ক্রিকেটার থাকলে দলের শক্তি বাড়ে। কখনও কখনও ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা সেটাই করেছি।”

ফ্লেমিং আরও জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া নয়। গোটা বছর ধরে চেন্নাইয়ের স্কাউট দল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতা নজরে রাখে। কে কেমন খেলছে, বর্তমান পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কে কতটা এগোতে পারে— সেই বিশ্লেষণ করেই ক্রিকেটার বাছা হয়। তাই এই তরুণরাই এখন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে ‘ভবিষ্যতের সম্পদ’। আইপিএলের নিলামে এই বদলে যাওয়া মানসিকতাই হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটের পরের অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + eleven =