পঞ্জাবে ব্যর্থ পাঞ্জাবি ! দক্ষিন আফ্রিকার কাছে ৫১ রানে লজ্জার হার ভারতের

মুল্লানপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫১ রানের লজ্জাজনক হারে ভারতীয় দলের ওপর নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একদিকে কোচ গৌতম গম্ভীর, অন্যদিকে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও সহ-অধিনায়ক শুভমন গিল—দলের তিন শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সিদ্ধান্ত ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। টেস্ট ও এক দিনের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক পরাজয়ের পর টি-টোয়েন্টিতেও দেশের মাটিতে হার ভারতীয় ক্রিকেটের প্রস্তুতি ও কৌশলকে আরও সন্দেহের মুখে ফেলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিং—দুই বিভাগেই ব্যর্থতার ছাপ স্পষ্ট। শুরু থেকেই ভারতীয় পেসারদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালান কুইন্টন ডি’কক। অর্শদীপ ও বুমরাহ কোনও দিকেই লাইন-লেংথ খুঁজে পাননি।

অর্শদীপের ৪ ওভারে ৫৪ রান, বুমরাহর ৪ ওভারে ৪৫ রান—দুই প্রধান পেসারের ৮ ওভারে মোট ৯৯ রান দেওয়া ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। উইকেটহীন এমন পারফরম্যান্স টি-টোয়েন্টির মতো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে বিরলই বলা চলে। বরুণ চক্রবর্তী নিজের প্রথম বলেই হেনড্রিক্সকে আউট করলেও, একা হাতে বেশি কিছু করার সুযোগ পাননি তিনি। অধিনায়ক সূর্যের বোলিং পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যখন দেখা যাচ্ছিল বুমরাহ ও অর্শদীপ ছন্দে নেই, তখনও তাদের পুরো ৪ ওভার করে করানো হয়। বিকল্প হিসেবে অক্ষর প্যাটেল, হার্দিক পাণ্ড্য বা শিবম দুবে—এদের আগে ব্যবহার করলে ম্যাচের পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। বড় মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়া এবং ডি’ককের বিরুদ্ধে পরিকল্পনার অভাব ভারতীয় দলের দুর্বলতা আরও স্পষ্ট করে। ব্যাটিং বিভাগও সমান হতাশাজনক। শুভমন গিল ও অভিষেক শর্মা—পঞ্জাবের দুই ক্রিকেটার—নিজের রাজ্যের মাটিতে ব্যাটে দাগ কাটতে পারলেন না।

গম্ভীরের পছন্দের দুই ব্যাটার একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ায় নির্বাচনের কৌশল নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। বড় শট মারার অযথা তাড়না, স্ট্রাইক রোটেশনের অভাব এবং প্রতিটি বলের পর চাপ বাড়ানো—ভারতীয় ব্যাটারদের কৌশলগত ভুল স্পষ্ট ছিল। তিলক বর্মা অবশ্য লড়াই ছাড়েননি। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে তিনি ৬১ রান করেন। তাঁকে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন জিতেশ শর্মা। বার্টম্যানের বলে বেল না পড়ায় জিতেশ জীবন পেলেও, শেষ পর্যন্ত তার কোনও বড় প্রভাব পড়েনি। ১৬২ রানে অল আউট হয়ে ভারত ম্যাচ থেকে কার্যত অনেক আগেই ছিটকে যায়। এই হারের সবচেয়ে বড় দিক হল—ভারতের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা।

দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা ভারতের সবকটি উইকেট তুললেন, অথচ ভারতীয় পেসাররা একটি উইকেটও নিতে পারলেন না। দু’মাস পরেই ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপ। এই অবস্থায় দলের ব্যাটিং, বোলিং এবং নেতৃত্ব—তিন ক্ষেত্রেই নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মোটের ওপর, মুল্লানপুরে ভারতের এই পরাজয় শুধু একটি ম্যাচ হার নয়—এটি দলগত দুর্বলতা, নেতৃত্বহীনতা এবং কৌশলগত ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 5 =