এক সময় টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য ছন্দে এগোলেও শেষ পর্যন্ত সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হল বাংলাকে। সোমবার হরিয়ানার বিরুদ্ধে অতি দুর্বল বোলিংয়ের জেরেই শেষ আটের লড়াই থেকে ছিটকে গেল অভিমন্যু ঈশ্বরণদের দল। পাঞ্জাব ও পণ্ডিচেরির কাছে হারের পর এই ম্যাচ ছিল কার্যত ‘করো অথবা মরো’। সেই চাপে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারল না বঙ্গ শিবির। এদিন বাংলার বোলিংয়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক নিঃসন্দেহে মহম্মদ শামির চার উইকেট।
চার ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে চারটি শিকার করলেও দলের ব্যর্থতা তাঁর দুর্দান্ত প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে গেল। শামি ছাড়া প্রায় কেউই বোলিং বিভাগে দাগ কাটতে পারেননি। প্রদীপ্ত এবং আকাশ দীপ—দু’জনেই দু’টি করে উইকেট নেন, সায়ন ঘোষ পান একটি। কিন্তু নিয়মিত উইকেট পড়ার চাপে রাখার বদলে বেশিরভাগ বোলারই রান বিলিয়ে বসেন। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে হরিয়ানা বড়সড় ১৯১ রান তুলে ফেলে। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন নিশান্ত সিন্ধু। রাষ্ট্রীয় টুর্নামেন্টে নিজেদের টিকে থাকার লড়াইয়ে নামার আগে বাংলা শিবিরে ছিল নানা চাপ।
বিমান বিভ্রাট সামলে দলে ফিরেছিলেন শাহবাজ আহমেদ, তবে তাঁর উপস্থিতি ম্যাচের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। টস জিতে প্রথমে বোলিং নিয়ে রান আটকানোর কৌশল নিয়েছিলেন অধিনায়ক অভিমন্যু। কিন্তু অর্ধেক ওভারের আগেই স্পষ্ট হয়ে যায়, পরিকল্পনা মাঠে নামানোর মতো ধার সেদিন ছিল না বেঙ্গল বোলিংয়ে। ১৯২ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলার শুরুটা আশাব্যঞ্জকই ছিল। ওপেনিংয়ে করণ লালের আউট হলেও সেখান থেকে চাপ বাড়তে দেননি অভিষেক পোড়েল। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে তাঁর ৪৭ রানের ইনিংস ম্যাচে নতুন উদ্দীপনা জোগায়। এরপর চার নম্বরে নেমে ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের ৪৪ রান বাংলাকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু এ দু’জনের পর আর কেউই দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ টেনে নিতে পারেননি।
ঘুবরাজ কেশওয়ানি ২৫ রান করে আউট হতেই ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে। লোয়ার মিডল-অর্ডার ও টেল-এন্ডাররা কেউই প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকায় প্রয়োজনীয় রানরেট ক্রমশ বেড়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৬৭ রানে অলআউট হয় বাংলা। হরিয়ানার চার বোলারই দু’টি করে উইকেট তুলে নিয়ে বাংলার ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন। টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পারফরম্যান্স দেখালেও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আত্মসমর্পণই শেষ পর্যন্ত বাংলার বিদায় নিশ্চিত করল। এবারের মতো জাতীয় টি-২০তে বাংলার অভিযান এখানেই থামল—দর্শকদের জন্য রেখে গেল হতাশা, আর দলের সামনে রেখে গেল আগামী মরসুমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ।

