বর্তমান ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫০–৩৬০ রানও আর নিরাপদ নয়—রায়পুরে ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ তা আরও একবার প্রমাণ করল। ভারতের ৩৫৮ রানের বিশাল স্কোরও শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের সামনে টিকল না। বুমরাহকে বিশ্রামে রাখার সিদ্ধান্ত আরও চোখে লাগল। কারণ তাঁকে ছাড়া ভারতীয় বোলিং আক্রমণ যেন ধার হারিয়ে ফেলেছে।
রাঁচির ম্যাচেও সাড়ে তিনশো রান তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ অবধি ম্যাচে ছিল। যদিও সেখানে শেষ হাসি ভারতই হেসেছিল। কিন্তু রায়পুরে সেই গল্পটা বদলে গেল। এদিন মার্করাম শুরু থেকেই ভয়ডরহীন ব্যাটিং করে ভারতীয় বোলারদের চাপে ফেলে দিলেন। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর এই ম্যাচে ওপেন করতে নেমেই এল দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। তাঁর সঙ্গে ব্রিৎজকি ও ব্রেভিসও কার্যকর ইনিংস খেললেন— যথাক্রমে ৬৮ ও ৫৪ রান। তাঁদের সম্মিলিত প্রতাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯.২ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল। ভারতীয় বোলারদের দিকে তাকালে হতাশাই বাড়ে। হর্ষিত রানা, অর্শদীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ—কারোর হাতেই ছিল না উইকেট আনার ধার। এত বড় রানতাড়া করতে নেমেও প্রোটিয়ারা একবারও বেসামাল হয়নি।
প্রশ্ন উঠছে—২০২৭ সালের বিশ্বকাপে এই বোলিং শক্তি নিয়েই কি বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারত? ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়, অবশ্যই, ছিলেন বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়। দু’জনের ১৯৫ রানের জুটি ভারতকে দাঁড় করিয়েছিল বিশাল রানের পাহাড়ে। রায়পুরে ৯৩ বলে ১০২ রানের চিরচেনা লড়াকু ইনিংস খেললেন বিরাট। রাঁচির পর এদিনও শতরান— টানা দু’বার সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি ১১তম বার। এই নজির বিশ্বের আর কোনো ব্যাটারের নেই। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এবি ডিভিলিয়ার্স। পাশাপাশি, বিভিন্ন ভেন্যুতে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির (৩৪*) রেকর্ডও ছিনিয়ে নিলেন তিনি। তাঁর পরেই আছেন শচীন তেণ্ডুলকার।রুতুরাজ গায়কোয়াড় পেলেন জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ভারতীয় ভবিষ্যতের ইঙ্গিত যেন আরো একবার স্পষ্ট করে দিল তাঁর ব্যাট। কিন্তু এত সব রেকর্ড, এত সব ব্যাটিং প্রদর্শন—শেষ পর্যন্ত রঙ চড়িয়ে দিল না ভারতের স্কোরবোর্ডে। দিনের শেষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৭ বছর বয়সেও বিরাট কোহলির আগুনে শরীরী ভাষা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। সেই লাফ, সেই উদ্দীপনা, সেই আবেগ—সবই প্রমাণ করে তিনি কখনও লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান না।
বাইশ গজে প্রতিপক্ষ বোলারদের পাশাপাশি নিজের ঘরের ভিতরেও নানা বিতর্কে জড়াতে হচ্ছে তাঁকে। গৌতম গম্ভীরের উপস্থিতি ড্রেসিং রুমে নতুন ধোঁয়াশা তৈরি করেছে— এমন গুঞ্জনও উঠেছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই বিরাট আবারও দেখালেন যে বড় মঞ্চের ক্রিকেটার কাকে বলে। তবু ক্রিকেট শেষ পর্যন্ত দলগত খেলা। একা বিরাট বা রুতুরাজ ম্যাচ জেতাতে পারে না। বোলিং বিভাগ ব্যর্থ হলে বড় রানও অকার্যকর হয়ে যায়— রায়পুরে তারই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল।

