“যত ক্ষণ মানসিক তীক্ষ্ণতা রয়েছে, তত ক্ষণ আমি জানি যে ঠিক আছি ” ! শতরানের পর নিজের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে অকপট বিরাট কোহলি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২৭,৮০৮ রান ও ৮৩টি শতরানের মালিক বিরাট কোহলি। তবু তাঁর রানের ক্ষুধা একবিন্দুও কমেনি। বয়স ৩৭ হলেও মাঠে নেমে জিততে সাহায্য করার ইচ্ছা, আগ্রাসন ও আবেগ একই রকম তীক্ষ্ণ। রাঁচীতে ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত শতরানের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রকাশিত ভিডিয়োতে নিজের প্রস্তুতি, মনোসংযোগ ও সাফল্যের রহস্য নিয়ে মুখ খুলেছেন কোহলি। সেই ভিডিয়োতে তাঁর ইনিংসের অসংখ্য ঝলক ধরা পড়েছে, আর কথায় উঠে এসেছে তাঁর অনন্য মানসিকতার ছবি। কোহলির মতে, ক্রিকেট জীবনে তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি সচেতনতা।

তিনি বলেছেন, “আমার কাছে আসল বিষয় হল সচেতনতা। আপনি পরিস্থিতি অনুযায়ী কতটা সচেতন, সাফল্য আর ব্যর্থতার সময় কতটা সচেতন— সেটাই বলে দেয় আপনি মানসিকভাবে খেলায় কতটা আছেন।” মাঠে নামার পর থেকে খেলাই তাঁর কাছে সব। বাইরের কিছুই কানে আসে না। প্রতিটি মুহূর্ত তিনি খেলাটার মধ্যে থেকে অনুভব করেন, প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।অবিশ্বাস্য সাফল্যের মালিক হয়েও তিনি থেমে যাননি। এখনও প্রতিদিন উন্নতির খোঁজ করেন। কোহলি আরও বলেছেন, “মনের মধ্যে কী চলছে তা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। তার জন্য পরিশ্রম জরুরি।

এক দিনে এটা হবে না। আমি এত বছর ধরে পরিশ্রম করেছি, আজও করি। প্রতিদিন আরও ভালো ব্যাট করার চেষ্টা করি। আমি এ রকমই।” রাঁচীতে ম্যাচের সেরার পুরস্কার নেওয়ার সময়ও একই কথা শোনানো যায় তাঁকে। সেখানেও তিনি মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, মাঠে বেশি সময় কাটানো নয়, মূল প্রস্তুতি আসে মন থেকে। “আমি মাঠের প্রস্তুতিতে বিশ্বাস করি না। মানসিক প্রস্তুতিটাই আসল। যত ক্ষণ শরীর ঠিক আছে এবং মানসিক তীক্ষ্ণতা রয়েছে, তত ক্ষণ আমি জানি যে ঠিক আছি।” ৩৭ বছর বয়সে এসে রিকভারির জন্য অতিরিক্ত বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, সেটাও অকপটে স্বীকার করেন তিনি। হঠাৎ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেও এত সহজে মানিয়ে নেওয়া তাঁর জন্য কেন কঠিন হয়নি, তাও ব্যাখ্যা করেছেন কোহলি।

৩০০টি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তাঁর ভাষায়, অনুশীলনে ভাল শট মারতে পারলে, এক-দু’ঘণ্টা ব্যাট করলে এবং খেলাটার সঙ্গে যুক্ত থাকলে জানবেন যে আপনি সঠিক জায়গায় আছেন। খারাপ ফর্মে থাকলে আরও বেশি নেট অনুশীলন করতে হয়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানসিক প্রস্তুতি ও খেলাকে উপভোগ করা। রাঁচীর ইনিংসের মতোই কোহলির এই বক্তব্যও প্রমাণ করে— সাফল্য তাঁকে আত্মতুষ্ট করেনি। সচেতনতা, আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও জিততে মরিয়া মানসিকতা— এ সবই আজও আগের মতো উজ্জ্বল। বয়স বাড়লেও থামেনি তাঁর লড়াই, থামেনি ক্রিকেটপ্রেম। বরং সময়ের সঙ্গে আরও নিখুঁত ও পরিণত হয়ে উঠেছে। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে কোহলি তাই শুধু রানমেশিন নন, মানসিক দৃঢ়তারও বিস্ময়কর প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 5 =