কুলদীপের ঘূর্ণিতে ভাগ্য ঘুরলো ভারতের ! দুরন্ত লড়াই প্রোটিয়াদের, ৩৫০ তেও জয় মাত্র ১৭ রানে !

লাল বলের টেস্ট ক্রিকেট শেষ করে সাদা বলে এক দিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত ফিরল হাসি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে। রাঁচীর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৭ রানে হারিয়ে সিরিজে ১,০ এগিয়ে গেল ভারত। শুধু জেতাই নয়, এই ম্যাচে দর্শকেরা যা দেখতে মাঠে এসেছিলেন;সেটা পেয়েছেন সমৃদ্ধভাবে। বিরাট কোহলির দারুণ শতরান এবং রোহিত শর্মার আগ্রাসী অর্ধশতরান গোটা ম্যাচের কেন্দ্রে ছিল। শেষ ওভার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জেদি লড়াই ম্যাচকে জমিয়ে রাখলেও শেষ হাসি হাসল ভারত।
রোহিত শর্মা গত দু’বছরে এক দিনের ক্রিকেটে এক বিশেষ ঘরানা গড়ে তুলেছেন;অত্যন্ত আক্রমণাত্মক সূচনা। ওপেন করতে নামেই পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব রান তোলা তাঁর লক্ষ্য। এর ফলে দলের বাকিদের উপর চাপ কমে যায়। যদিও আগ্রাসী খেলার ঝুঁকি নিয়ে তিনি সবসময় সচেতন থেকেও নিজের স্টাইল বদলান না। রাঁচীতেও এক রানের মাথায় ক্যাচ পড়ে যাওয়ার পরও আক্রমণাত্মক পথ থেকে সরেননি। করবিন বশকে টানা দু’টি চার এবং সুব্রায়েনকে দু’টি ছয় মারার দৃশ্য দর্শককে উন্মাতাল করেছে। তবে সবচেয়ে প্রশংসনীয় ছিল কোহলির সঙ্গে তাঁর দুর্দান্ত জুটি;সিডনির পর রাঁচীতেও এই পার্টনারশিপ ভারতকে শক্ত ভিত দেয়।
কোহলির শতরান নিছক একটি শতরান নয়, বরং তা ছিল তাঁর ধৈর্য, ক্লাস এবং ম্যাচ সচেতনতার নিদর্শন। মার্কো জানসেনকে ছয় মেরে শাহিদ আফ্রিদির নজির ভাঙার মুহূর্তটি ম্যাচের সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃশ্য। দীর্ঘদিন ধরে এক দিনের ক্রিকেট কোহলির বিশেষ পছন্দের ফরম্যাট;এর সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর শৈশব, পরিবারের সঙ্গে খেলা দেখা এবং এই ফরম্যাটে সফল হওয়ার স্বপ্ন। তাই ওজন কমিয়ে শরীরকে হালকা করে ফিটনেস ধরে রাখা তাঁর দায়বদ্ধতার বড় উদাহরণ।
আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে নতুন বনাম অভিজ্ঞতার দ্বন্দ্বও। গুরু গম্ভীর কোচ হওয়ার পর দলে তারুণ্যকে বেশি সুযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে, অনেকটা গ্রেগ চ্যাপেলের সময়কার নীতির মতো। কিন্তু রাঁচীর ম্যাচ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল;বড় ম্যাচে এখনো ভরসা অভিজ্ঞদেরই। স্কোরবোর্ডই তা বলছে: রোহিত (৩৮) অর্ধশতরান, কোহলি (৩৭) শতরান, রাহুল (৩৩) অর্ধশতরান, জাডেজা (৩৬) ৩২ রান। বিপরীতে তরুণদের রান খুবই কম;যশস্বী ১৮, রুতুরাজ ৮। শুধু তারুণ্যে ভর করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা যায় না; দলের মাঝে মেসি কিংবা রোনাল্ডোর মতো সিনিয়র ভিত্তি থাকা জরুরি;এটা যত দ্রুত বোঝা যাবে ততই মঙ্গল।
যদিও জয় এসেছে, সমস্যা মুক্ত নয় ভারত। প্রথমত, মিডল অর্ডারকে স্থায়ী ও শক্তিশালী করা জরুরি। শুভমন গিল ও ঋষভ পন্থ ফিরে এলে কিছুটা স্থিরতা মিললেও ওয়াশিংটনকে পাঁচ নম্বরে নামানোর মতো ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না। রুতুরাজকে প্রস্তুত করতে সময় দেওয়া উচিত;একটি সিরিজ দেখে ছাঁটাই করলে ক্ষতি হবে।
দ্বিতীয়ত, মাঝের ওভারে উইকেট তোলার সমস্যা থেকেই গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ১১ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও ৩০০ রান তুলে ফেলে;কারণ প্রতিটি উইকেটের পর জুটি গড়ে ওঠে, যা ভারত ভাঙতে পারেনি। এমন হলে বিশ্বকাপের আগে চিন্তার কারণ থেকেই যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + six =