ঘরের মাঠে ৪০৮ রানের লজ্জাজনক হারের পরও ভারতীয় ক্রিকেট দলে হতাশার বিশেষ ছাপ দেখা গেল না। নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিপর্যয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার হাতেও একইভাবে চুনকাম হওয়ায় সমর্থক এবং বিশেষজ্ঞদের ক্ষোভ বেড়েছে। এমন সময়ে অধিনায়ক ঋষভ পন্থের ম্যাচ-পরবর্তী মন্তব্য আরও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
টেস্ট ইতিহাসে ভারতের অন্যতম বড় ব্যবধানে হারের পর তিনি বলেন, এই হার “লিটল ডিসাপয়েন্টিং”—অর্থাৎ একটু হতাশাজনক। টেস্ট ব্যবধানে সর্বোচ্চ লজ্জাজনক পরাজয়ের পরও কিভাবে হতাশার মাত্রা ‘একটু’, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে ক্রিকেটমহলে। ম্যাচ শেষে পন্থ যদিও পরাজয়ের দায় স্বীকার করেছেন, কিন্তু তার ব্যাখ্যা সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ভারতের অধিনায়ক জানান, দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা সিরিজ জুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করেছে এবং ভারতকে দাঁড়াতে দেয়নি। তাঁর বক্তব্য, “দল হিসাবে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। হার থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিপক্ষকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, ক্রিকেটে সুযোগ কাজে লাগানোই সবচেয়ে বড় বিষয়, আর ভারতীয় দল ঘরের মাঠেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। ফলে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো হাতছাড়া হয় এবং ম্যাচের গতিপথ প্রতিপক্ষের হাতে চলে যায়। পন্থ স্বীকার করেছেন, শুধু দক্ষতা নয়, মানসিকতাও ছিল দুর্বল। তাঁর কথায়, ম্যাচ পাঁচ দিন গড়ালেও জয়ী হওয়ার মানসিকতা দলের মধ্যে দেখা যায়নি। প্রতিটি সেশনে চাপ প্রয়োগের ইচ্ছা এবং জয়ের ক্ষুধা ফুটে ওঠেনি।
তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে বিজয়ের মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে, নইলে ঘরের মাঠ হোক বা বিদেশ—ফল একই থাকবে। এই সিরিজে ভারতীয় দলের কিছু স্পষ্ট দুর্বলতা সামনে এসেছে। ব্যাটিং ব্যর্থতা, ম্যাচ পরিস্থিতির ভুল মূল্যায়ন, বোলারদের ধারহীনতা এবং ফিল্ডিংয়ে অনিশ্চয়তা দলের পরাজয়ের মূল কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আত্মতুষ্টি এবং প্রস্তুতির ঘাটতি প্রকট ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, বিপরীতে ভারত সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিয়েছে। ফলাফল—রানের দিক থেকে বিব্রতকর হুমিলিয়েশন এবং সিরিজ হার।
পন্থ বলেছেন, দল এখন পরিকল্পনায় মন দেবে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে উন্নতির পথে এগোবে। তবে সমালোচকদের যুক্তি—কথা নয়, মাঠেই প্রমাণ প্রয়োজন। ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্ন, ঘরের মাঠে টানা হারের পরেও কেন দলের মধ্যে জরুরি পরিস্থিতির অনুভূতি নেই? এত বড় পরাজয়ের পরও “লিটল ডিসাপয়েন্টিং” বলাটা কি ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক করে দেখার ইঙ্গিত নয়? ভারতীয় দল এখন কঠিন মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে। ঘরের মাঠের অব্যর্থত্ব ভাঙতে শুরু করেছে, আর প্রতিপক্ষরা ভারতকে আগের মতো ভয় পাচ্ছে না। তাই এই সিরিজ শুধু পরাজয় নয়, আত্মসমালোচনার অ্যালার্মও। ঋষভ পন্থ ও কোচিং স্টাফের সামনে এখন সবচেয়ে বড় পরীক্ষা—এই লজ্জাজনক পরাজয়কে বদলের অনুপ্রেরণা হিসাবে ব্যবহার করা। নইলে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেট আরও গভীর সঙ্কটে পড়ে যেতে পারে।

