ভারতের ব্যাটিং ধস, তবু কিছুটা মান রাখল ‘ওয়াশি–কুলদীপ’ ! দিনের শেষে ৩১৪ রানে এগিয়ে প্রোটিয়া বাহিনী

ন’নম্বরে নেমে ১৩৪ বল খেলে কুলদীপ যাদব যে ইনিংস খেললেন, তা শুধু ভারতের নয়, সারা সিরিজ়ের প্রেক্ষিতে দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। চলতি টেস্ট সিরিজ়ে কোনও ভারতীয় ব্যাটার এত বল সামলাতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনের শেষে তিনি বলেছিলেন—এই পিচ রাস্তার মতো পাটা। কথাটি প্রমাণও করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিরুদ্ধে ধৈর্য ধরে, টেকনিক্যালি সঠিক খেললেন তিনি। বাকিরা যেখানে ব্যাট করতে হিমশিম খেলেন, সেখানে কুলদীপ সেই একই পিচে সময় কাটিয়ে, বল বুঝে, ভুল শট না খেলে দলকে সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। ঋষভ পন্থদের তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে—টেস্ট ম্যাচে অপেক্ষা করা, বল বিচার করা, ভুল না করে টিকে থাকা—এই মানসিকতাই ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র।

ইডেনে স্পিনারদের সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিল ভারত। গুয়াহাটিতে ব্যর্থ হল পেসারদের বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে মার্কো জানসেনের ৬ উইকেটের সামনে মাত্র ২০১ রানে অল আউট হলো ভারত। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা নিল বিশাল ২৮৮ রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে দিনের শেষে তাদের রান ২৬/০, অর্থাৎ এখনও ৩১৪ রানে এগিয়ে রয়েছে বাভুমা অ্যান্ড কোং। হাতে রয়েছে পুরো ১০টি উইকেট। এই একই পিচে দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দিন ব্যাট করেছে, ১২ ঘণ্টা ক্রীজে থেকেছে। নীচের সারির ব্যাটাররাও তুলেছেন ২৬৪ রান। যেখানে ভারত সাড়ে পাঁচ ঘণ্টাও টিকতে পারেনি—সেখানেই প্রশ্ন উঠছে টেস্টের মানসিকতা, ধৈর্য, শট বাছাই ও টেকনিক নিয়েব্যাটারদের অনেকটাই উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার দোষ রয়েছে। লোকেশ রাহুল নতুন বলে দৃঢ় দেখালেও স্পিন আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লেন। কেশব মহারাজের সামান্য টার্ন হওয়া বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। বল ভালো হলেও অভিজ্ঞ রাহুলের সেটা সামাল দেওয়া উচিত ছিল। যশস্বী জয়সওয়ালই একমাত্র সাবলীল ছিলেন; কিন্তু ৫৮ রানের মাথায় সাইমন হারমারের বাউন্স ঠিকভাবে অপেক্ষা না করায় ভুল শটে আউট হলেন। টেস্ট ক্রিকেটে কোমর সোজা রেখে ভুল বলের অপেক্ষাই সঠিক কৌশল—কিন্তু ভারতীয় ব্যাটাররা সেটা ভুলে গিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে।সেখান থেকে লড়াইয়ের ছবি ফুটে উঠল ওয়াশিংটন সুন্দর ও কুলদীপের ব্যাটিংয়ে।

আগের টেস্টে তিন নম্বরে উঠেছিলেন ওয়াশিংটন; এই ম্যাচে আট নম্বরে নেমেও রান পেলেন। এই সিরিজ়ে তিনিই ভারতের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার। আর তাঁকে জুড়ে জ্বলে উঠলেন কুলদীপ—৩৫ ওভার ক্রিজে, ৭২ রানের জুটি। সেই জুটির কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় নতুন বল নিতে বাধ্য হয়। তাঁরা দেখিয়ে দিলেন—উইকেটে পড়ে থাকলে রান ঠিক আসবে। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারদের ব্যাটিং থেকেই বোঝা গেল টেস্ট ব্যাটিং মানে ধৈর্য। তারা কোনও তাড়াহুড়ো করেনি। খারাপ বলের অপেক্ষা করেছে, বুমরাহ-সিরাজের ভালো বল খেলেছে, কিন্তু উইকেট দেয়নি। স্পিনারদের বিরুদ্ধেও একই কৌশল। খেলা বন্ধ হওয়ার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২৬/০—আর এগিয়ে ৩১৪।

এখান থেকেই স্পষ্ট—দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট ক্রিকেটের প্রকৃত পাঠ দিয়েছে ভারতকে। তাঁদের ব্যাটিংয়ে ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা ও টেকনিক ছিল। ভারতের ছিল বেপরোয়া শট, সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো এবং ম্যাচ পরিস্থিতি না বোঝার ব্যর্থতা। এখন প্রশ্ন—ভারতের ব্যাটাররা কি টেস্ট মাইন্ডসেট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন? নাকি ছোট ফরম্যাটের প্রভাব তাঁদের টেস্ট ক্রিকেটকে ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত করছে? সময়ই বলবে। তবে কুলদীপ যাদবের ব্যাটিং ভারতের ড্রেসিংরুমে সতর্কবার্তা দিয়ে গেল—ধৈর্যই টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম শর্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five − 4 =