গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলতি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোড়া ইনিংস—সেনুরান মুথুস্বামী ও মার্কো জানসেনের ব্যাটিং—ভারতকে প্রথম থেকেই চাপে ফেলে দিল। তৃতীয় সেশনের শেষে ৪৮৯ রানে প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর ব্যাট হাতে নেমে ভারত দিন শেষ করল ৯/০ স্কোরে। তবে ম্যাচে টিকে থাকতে এবং সিরিজ় ড্র নিশ্চিত করতে হলে ঋষভ পন্থদের সামনে এখন দীর্ঘ রানের পাহাড় টপকানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ। শনিবার ৬ উইকেটে ২৪৭ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা যে অবস্থানে ছিল তা আশাব্যঞ্জক হলেও ভয় পাওয়ার মতো ছিল না। কিন্তু রবিবার বাকি ৪ উইকেট হাতে রেখেই তারা আরও ২৪২ রান তোলে, যা ভারতীয় বোলারদের জন্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বিশেষ করে টেলএন্ডারদের সামনে বল হাতে বুমরাহ ও কুলদীপরা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। শেষ তিন উইকেটেই দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ১৫৫ রান—এমন দৃশ্য হোম কন্ডিশনে ভারতের ক্ষেত্রে খুবই বিরল।
পুরো দিনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার সেনুরান মুথুস্বামী। সাত নম্বরে নেমে ২০৬ বল ধরে খেলতে খেলতে তিনি তুলে ফেলেন ব্যক্তিগত প্রথম টেস্ট শতরান—১০৯। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনমতো আক্রমণ করে দলের রানের গতিকে এগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১০টি চার এবং ২টি ছক্কায় সাজানো তাঁর ইনিংস প্রোটিয়াদের প্রবল দৃঢ়তা এনে দেয়। শুরুতে কাইল ভেরেন (৪৫) এবং পরে মার্কো জানসেনকে সঙ্গী করে বিপর্যয় ঠেকান মুথুস্বামী।
ভেরেনের ইনিংসেও ছিল ৫টি চার। জানসেনের ব্যাটিংও ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম টেস্ট শতরান হাতছাড়া হলেও মাত্র ৯১ বলে ৬টি চার ও ৭টি ছক্কায় ৯৩ রানের আগ্রাসী ইনিংস দলকে নিরাপদ লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। কুলদীপ যাদবের বলে আউট না হলে হয়তো শীর্ষ স্কোরারও হতে পারতেন জানসেন। শেষদিকে কেশব মহারাজ অপরাজিত থাকেন ১২ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ পাঁচ ব্যাটার মিলিয়ে করেছেন ২৬৪ রান—যা ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং হোম দলের ড্রেসিংরুমে চাপ বাড়িয়ে দেয়।।ভারতের পক্ষে বোলাররা এদিন একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। বুমরাহ এবং কুলদীপ উইকেট পেলেও ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে তারা ধার হারান। ভুমিকা রাখতে পারেননি কোনো পেসারই লোয়ার অর্ডারের বিরুদ্ধে।
কৌশলগত ত্রুটি, লাইন ও লেন্থের ব্যত্যয় এবং ফিল্ডিং সেটআপের ঘাটতি দক্ষিণ আফ্রিকার টেলএন্ডারদের রানের উৎসবে পরিণত করে পরিস্থিতি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের লক্ষ্য ছিল দিনের শেষ overs গুলি উইকেট না হারিয়ে খেলা। যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল সেই লক্ষ্য পূরণ করে ৯/০-তে দিন শেষ করেন। মাঠের অবস্থা এখনও ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক, যা ভারতের জন্য আশার জায়গা। তবে প্রথম ইনিংসে অন্তত ৬০০ রান তুলতে না পারলে সিরিজ় হার এড়ানো কঠিন হবে। সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে। এখন ভারতের ব্যাটারদের দায়িত্ব—বড় ইনিংস গড়া এবং লিড নেওয়ার পথ তৈরি করা। প্রথম সেশনে উইকেট না হারানোই হবে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। না হলে গুয়াহাটি টেস্টে সিরিজ় ড্র করা দূরের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

