“পিচ একেবারেই বিপজ্জনক বা খেলার অযোগ্য ছিল না” ! ইডেনে লজ্জার হার হেরে মাথা নত কোচ গম্ভীরের

ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের প্রথম দিন থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইডেন গার্ডেন্সের পিচ। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই গৌতম গম্ভীর স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কেমন ধরনের ২২ গজ তিনি চান। দলের কোচ হিসাবে তিনি ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলার মতো পিচ চেয়েছিলেন—যেখানে স্পিনাররা নয় বরং ন্যাচারাল ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ারের কারণে ব্যাটারদের ধৈর্য, ফুটওয়ার্ক এবং রক্ষণশীলতা প্রকৃত বিচার পাবে। গম্ভীরের সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায় চার দিন জল না দিয়ে পিচ তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত ক্ষয় হওয়া, নিম্ন বাউন্স ও অনিশ্চিত মুভমেন্টের উইকেট তৈরি করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পিচ ভারতীয়দের জন্য বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। হার হজম করার পরেও গম্ভীর কোনও অভিযোগ তোলেননি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, পিচ একেবারেই বিপজ্জনক বা খেলার অযোগ্য ছিল না। উদাহরণ হিসেবে তিনি টেম্বা বাভুমা, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং অক্ষর পটেলের ইনিংসের কথা বলেছেন। তাঁর দাবি—“এমন পিচে ব্যাটারদের টেকনিক, মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়, আমরা সেটা পারিনি।” তিনি আরও যুক্তি দেখিয়েছেন যে এই ম্যাচে জোরে বোলাররাই বেশি উইকেট নিয়েছেন, ফলে পিচকে স্পিন সহায়ক বলে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়—টার্গেট ১২৪ রান হয়েও ভারত কেন জিততে পারল না? গম্ভীর স্বীকার করেছেন, দল ভাল খেলতে পারেনি, কিন্তু সেই ব্যর্থতার মূল কারণ বিশ্লেষণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই রেখেছেন। সমালোচকদের মতে, এটি গম্ভীরের কোচিং দর্শনের পুনরাবৃত্তি। গত বছর নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও স্পিন সহায়ক পিচ তৈরির জেদে সাফল্য মেলেনি, বরং ০–৩ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিল ভারত। তবু অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বদলে গম্ভীর আবারও বিপজ্জনক পরীক্ষার পিচ বেছে নিলেন এবং পরিণতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও একই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হল। এখানেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু—গম্ভীরের পিচ দর্শন কি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে? প্রথম একাদশ নির্বাচনে তাঁর সিদ্ধান্তগুলোও সমালোচনার মুখে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অভিজ্ঞ ব্যাটারদের বাদ দেওয়া, ফর্মহীন ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া, কিংবা ম্যাচ রিডিংয়ের প্রচলিত কৌশলের বাইরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা—সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে তাঁর নেতৃত্বের ওপর। নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরেও দলের পারফরম্যান্সে উন্নতি নেই। দলকে চ্যালেঞ্জ দিতে গিয়ে যদি জয়ের পথই বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা কৌশল নয়—হঠকারিতা। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সাম্প্রতিক লজ্জাজনক হারের পর পরিষ্কার, কেবল পিচ নয়—নেতৃত্ব, নির্বাচন এবং পরিকল্পনার জায়গাতেই বড় সমস্যা। এই ব্যর্থতা থেকে দায় এড়াতে পারবেন না গম্ভীর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =