অসাধারন বুমরাহ , ঘূর্ণি কুলদীপের ! ইডেনে প্রথম দিনের শেষে চালকের আসনে গিলবাহিনী

ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই ইডেন গার্ডেন্সের ২২ গজকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল উত্তেজনা। গত কয়েক দিন ধরে পিচ নিয়ে যথেষ্ট টানাপোড়েন চলছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ও পিচ প্রস্তুতকারকদের মধ্যে। দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের প্রথমে পছন্দ হয়নি পিচের চরিত্র। তিনি স্পষ্টভাবেই আপত্তি জানান সিএবির প্রধান কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়কে। যদিও সুজন মুখোপাধ্যায় পিচের মূল চরিত্র বদলানোর চেষ্টা করেননি, তাঁকে যতটা পেরেছেন শেষ তিন–চার দিনে পিচকে টিম ইন্ডিয়ার উপযোগী করার চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টা বাস্তবে কতটা সফল হল, তা জানা যাবে ম্যাচের শেষে, তবে প্রথম দিন শেষেই স্পষ্ট—ইডেনে দু’রকম বাউন্স থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ব্যর্থতার আসল কারণ পিচ নয়, জসপ্রিত বুমরাহ। নিখুঁত লাইন–লেংথে বোলিং করে বুমরাহ প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ের ভিত নড়িয়ে দেন একাই। যে কোনও ধরনের পিচে প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলার তাঁর ক্ষমতা ফের প্রমাণিত হলো।

অসাধারণ জায়গায় বল ফেলে, মাঝে মাঝে অসাধারন ইয়র্কার করে এবং ব্যাটারদের থমকে রেখে তিনি মাত্র ২৭ রান দিয়ে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। তাঁর পাশাপাশি দারুণ ছন্দে দেখা গেল কুলদীপ যাদবকে। দুরন্ত ফর্মে থাকা এই স্পিনার পিচ থেকে তেমন বাড়তি সাহায্য না পেয়েও ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হন। ৩৬ রান দিয়ে তিনি নিলেন ২ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা এবং উইয়ান মুলডারেরা তাঁর গুগলি এবং টার্ন বুঝতেই পারলেন না। ১৫৯ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ৫৫ ওভার টিকতে পেরে। এক জন ব্যাটারও বড় ইনিংস খেলতে পারলেন না।

প্রোটিয়াদের ভরসা জোগানোর মতো স্থিরতা দেখা গেল না কারোর ব্যাটে। ভারতীয় দলের হয়ে চোখে পড়ার মতো অবদান রাখলেন ঋষভ পন্থও। চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে তিনি শুধু ব্যাটিং ও কিপিং অনুশীলনই করেননি, বরং প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের প্রতিটি শটের প্যাটার্ন, কোন এলাকায় রান তুলতে পছন্দ করেন—সব নোট করে বোলারদের বলে গেছেন। তাঁর সাজেশন থেকে একাধিকবার সাফল্য পেয়েছেন বোলাররা, যার মধ্যে বাভুমার আউট হওয়া অন্যতম। ডিআরএস নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁকে যথেষ্ট পরিণত মনে হয়েছে। ভারতের বাকি বোলারদের মধ্যে অক্ষর পটেল ১ উইকেট ও মহম্মদ সিরাজ ২ উইকেট তুললেও সিরাজকে খানিক বেমানান লেগেছে। দিনের শেষে ব্যাট হাতে নেমে ভারত হারিয়েছে মাত্র ১ উইকেট এবং এগিয়ে রয়েছে ১২২ রানে।

প্রথম দিনের হিসেবে এটি সুবিধাজনক অবস্থান বলেই মনে করা যায়। তবে ইডেনের ২২ গজ শনিবার আরও কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলতে পারে ভারতীয় ব্যাটারদের। রাহুলরা এই চ্যালেঞ্জে সফল না হতে পারলে গম্ভীর–সুজন পিচ বিতর্ক আরও উত্তাল হতে পারে। প্রথম দিন খেলা হয়েছে ৭৫ ওভার—নির্ধারিত ৯০ ওভার থেকে পুরো ১৫ ওভার কম। বিকেল ৪টের মধ্যেই ফ্লাডলাইট জ্বালাতে হওয়ায় নভেম্বরের কলকাতায় সকাল ৯.৩০ মিনিটে খেলা শুরু করা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফলে মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি আলোচনার কেন্দ্রে সেই রয়ে গেল পিচ এবং তার সঙ্গে নতুন সংযোজন আলো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + eight =