ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হল এক স্মরণীয় সন্ধ্যা—নন্দনকাননে দেবীবরণ। বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষকে ঘিরে আয়োজন করা হয়েছিল সিএবি-র জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, সিএবি সভাপতি তথা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ঝুলন গোস্বামী সহ একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার উপস্থিত ছিলেন এই মহোৎসবে। এদিন ইডেন গার্ডেন্স হয়ে উঠেছিল উৎসবের মঞ্চ, ক্রিকেটপ্রেমী ও ক্রীড়াবিদদের ভিড়ে মুখরিত ছিল সমগ্র স্টেডিয়াম। সংবর্ধনার শুরুতে সিএবির তরফে রিচাকে উত্তরীয় ও ফুল-মিষ্টি দিয়ে বরণ করা হয়।
এরপরই তাঁকে তুলে দেওয়া হয় সোনার ব্যাট ও বল—যা তাঁর অনবদ্য পারফরম্যান্সের প্রতীক। সঙ্গে প্রদান করা হয় ৩৪ লক্ষ টাকার পুরস্কার। এই সংখ্যাটি বেছে নেওয়ার বিশেষ তাৎপর্যও রয়েছে—ফাইনালে রিচার বিধ্বংসী ৩৪ রানের ইনিংসই ভারতের বিশ্বজয়ের অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছিল। এই কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী নিজ হাতে তাঁকে সেই সোনার ব্যাট ও অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন। তবে অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় চমক আসে এরপরই। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে রিচাকে সম্মানিত করা হয় রাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘বঙ্গভূষণ’ উপাধিতে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজ হাতে তাঁকে উত্তরীয়, সোনার চেন ও সম্মাননাপত্র প্রদান করেন। এর পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের সাম্মানিক ডিএসপি পদে নিয়োগের ঘোষণাও করা হয়, যা এই তরুণ প্রতিভার কৃতিত্বকে আরও এক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেল। অনুষ্ঠানের এক বিশেষ মুহূর্তে সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেন ফ্রিডম ট্রফির রেপ্লিকা। পরবর্তীতে সেই রেপ্লিকাটি মুখ্যমন্ত্রী উপহার দেন রিচাকে, বাংলার ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁর অবদানের নিদর্শন হিসেবে। সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রিচার মতো প্রতিভা পেয়ে বাংলা গর্বিত। ওর সাফল্য শুধু বাংলার নয়, সমগ্র ভারতের গর্ব।” সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রশংসায় ভরিয়ে দেন তরুণ ক্রিকেটারকে। রিচার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল আবেগ ও কৃতজ্ঞতা।
তিনি জানান, “এই সম্মান আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বাংলার মানুষের ভালোবাসা আমাকে আরও প্রেরণা জোগাবে।” সেদিনের ইডেন গার্ডেন্স যেন এক উৎসবমুখর নন্দনকানন—যেখানে দেবীবরণের আবহে সোনার মেয়ে রিচা ঘোষকে ঘিরে একত্র হয়েছিল গোটা বাংলা। তাঁর সাফল্যে গর্বিত পুরো রাজ্য, আর তাঁর ভবিষ্যতের পথ আরও উজ্জ্বল হোক, সেই আশাই রাখলেন উপস্থিত সকলে।

