শামি-শাহবাজের দাপটে শেষ দিনে জয় ছিনিয়ে নিল বাংলা

জাতীয় দলে অনেকেই হয়তো তাঁকে এখন ‘ব্রাত্য’ বলে মনে করেন। কিন্তু মাঠে নামলে মহম্মদ শামি যে এখনও সমান কার্যকর, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিলেন এই তারকা পেসার। রনজি ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচে গুজরাটের বিরুদ্ধে তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ে উড়ে গেল প্রতিপক্ষ। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচে মোট ৮ উইকেট তুলে নিলেন শামি। অন্যদিকে চোট সারিয়ে ফেরা অলরাউন্ডার শাহবাজ আহমেদও ছিলেন সমান বিধ্বংসী। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি নেন ৯ উইকেট। তাঁদের জুটি গুজরাটকে ১৪১ রানে হারিয়ে বাংলাকে এনে দিল টানা দ্বিতীয় জয় ও পূর্ণ ৬ পয়েন্ট। ফলে দুই ম্যাচে বাংলার সংগ্রহ দাঁড়াল ১২ পয়েন্টে।

ইডেন গার্ডেন্সে এই ম্যাচের শুরুটা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না অভিমন্যু ঈশ্বরণের দলের জন্য। প্রথম ইনিংসে বাংলা গুটিয়ে যায় ২৭৯ রানে। ব্যাটারদের মধ্যে সুমন্ত গুপ্ত ৬৩, সুদীপ কুমার ঘরামি ৫৬ এবং অভিষেক পোড়েল ৫১ রান করে কিছুটা ভরসা জোগান। তবে কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। সেই জায়গা থেকেই ম্যাচে প্রাণ ফেরান বাংলার বোলাররা। গুজরাটকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাকে এগিয়ে দেন শাহবাজ আহমেদ। চোট সারিয়ে দলে ফিরে তিনি ঝড় তোলেন বোলিংয়ে—মাত্র ৩৪ রান খরচ করে তুলে নেন ৬ উইকেট। গুজরাটের পক্ষে একমাত্র মনন হিংরাজিয়া কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন, করেন ৮০ রান। বাংলার হাতে তখন ১১২ রানের লিড।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলার ব্যাটাররাও খুব বড় রান তুলতে পারেননি। তবে লিডটা আরও বাড়িয়ে তোলেন তাঁরা। সব মিলিয়ে গুজরাটের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় প্রায় ২৮০ রানের কাছাকাছি। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে নেমে একসময় মনে হচ্ছিল ম্যাচ ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে। কারণ, গুজরাটের উর্ভিল প্যাটেল ও জয়মিত প্যাটেল দুরন্ত জুটি গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন। উর্ভিল শতরান (১০৯) করে বাংলার জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছিলেন।

কিন্তু ক্রিকেটে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় মুহূর্তে। উর্ভিল হঠাৎ চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হন। সেই সময় ম্যাচের নাটকীয় মোড় নেয়। নামেন নতুন ব্যাটার উমং কুমার। তাঁকে ফেরান শাহবাজ আহমেদ, আর সেখান থেকেই গুজরাটের লড়াই শেষ হয়ে যায়। এরপর বাকি কাজ সারেন শামি। দুরন্ত রিদমে টানা তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি। তাঁর বলের গতি, সুইং, এবং নিখুঁত লেন্থে গুজরাট ব্যাটারদের কাছে কোনো উত্তর ছিল না।

শেষ পর্যন্ত গুজরাটের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৩৮ রানে। ফলে বাংলা জয় পায় ১৪১ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলার বোলিং বিভাগে শামি ৩৮ রানে ৫ উইকেট এবং শাহবাজ ৩ উইকেট নেন। দুই বোলারের এই বিধ্বংসী পারফরম্যান্সে গুজরাটের কোনো ব্যাটারই টিকতে পারেননি।

টানা দুই ম্যাচে জয় পেয়ে বাংলা এখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। দলের বোলিং শক্তি যে দেশের সেরা পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তা ইডেনের সবুজ উইকেটে ফের একবার প্রমাণ করলেন শামি-শাহবাজরা। জাতীয় দলে না থাকলেও নিজের ফিটনেস ও ফর্ম ধরে রেখে বাংলার হয়ে এই দুই তারকা দেখিয়ে দিলেন—‘ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 19 =