দিল্লির বাদশাহ জয়সওয়াল ! ভারতের বিরূদ্ধে প্রথম দিনেই কোনঠাসা ক্যারিবিয়ানরা

প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র আড়াই দিনে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। তাই দ্বিতীয় টেস্টের আগেই ক্রিকেট মহলে জল্পনা ছিল—দিল্লিতেও কি একই ছবি দেখা যাবে? ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, তাই আগেভাগে কিছু বলা কঠিন। তবে প্রথম দিনের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, আর একবারও টিম ইন্ডিয়াই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। কারণ প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর ২ উইকেটে ৩১৮, এবং ক্রীড়াসূচকের দিকে তাকালে বোঝাই যাচ্ছে—রানের পাহাড় গড়ার দিকে এগোচ্ছে শুভমান গিলের দল।

দিল্লিতে প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন শুভমান গিল। শুরুটা ছিল সাবধানী। দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও কেএল রাহুল প্রথম দিকে উইকেটে সময় কাটান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা প্রথম স্পেলে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত বল করছিলেন। রাহুল কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও, সেট হয়ে ৫৪ বলে ৩৮ রানে জোমেল ওয়ারিকানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। তখন ভারতের রান ৫৮। প্রথম সেশনে ভারত ১ উইকেটে ৯৪ রানে পৌঁছায়।

লাঞ্চের পর যশস্বীর ব্যাটে ঝড়। প্রথম সেশনে সংযত ছিলেন, কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে তিনি নিজের স্বভাবসিদ্ধ ছন্দে ফিরে আসেন। ড্রাইভ, পুল, কাট—সব শটই বেরোয় পাঠ্যবইয়ের মতো নিখুঁততায়। হাফসেঞ্চুরি করতে সময় লেগেছিল ৮২ বল, কিন্তু পরের ৫০ রান করতে লাগল মাত্র ৬৩ বল। তাঁর ব্যাটিংয়ের গতি, আত্মবিশ্বাস এবং বল নির্বাচনের পরিপক্বতা—সব মিলিয়ে যেন এক পরিণত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি। এদিনের ইনিংসের মাধ্যমে যশস্বী জাতীয় দলের হয়ে সপ্তম সেঞ্চুরি করলেন। ২২৪ বলে তাঁর স্কোর ১৭৩*—যা দলের ভিত শক্ত করেছে।

অন্য প্রান্তে সাই সুদর্শনও দারুণভাবে নিজের ইনিংস গড়ছিলেন। ইংল্যান্ড সফরে তাঁর পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিল না, কিন্তু ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর আস্থা রেখেছিল। সেই আস্থার মর্যাদা রাখলেন এই তরুণ ব্যাটার। তবে দারুণ খেলতে খেলতে তিনিও ওয়ারিকানের এক নিখুঁত বলের শিকার হন। অনেক বড় ব্যাটসম্যানও যে ধরনের ডেলিভারিতে বিপাকে পড়েন, ঠিক তেমনই একটি স্পিনারস ড্রিম ডেলিভারিতে আউট হলেন সুদর্শন।

দিনের শেষে অপরাজিত রয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল (১৭৩) এবং অধিনায়ক শুভমান গিল (২০*)। উইকেটে তাঁরা দুজনই স্বচ্ছন্দ। গিলকে খুব একটা ঝুঁকি নিতে দেখা যায়নি, বরং তিনি নিখুঁতভাবে যশস্বীকে সঙ্গ দিচ্ছেন। এই জুটি যদি দ্বিতীয় দিন সকালেও ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে ভারতের স্কোর ৫০০ পেরোনো অবধারিত।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইনিংস শুধু যশস্বীর প্রতিভার প্রদর্শন নয়, তাঁর মানসিক পরিপক্বতারও পরিচায়ক। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরি করার পর থেকে তাঁর ব্যাটিংয়ে যে পরিণতি এসেছে, তা দিল্লি টেস্টের প্রথম দিনেই পরিষ্কার হয়ে গেল।

সব মিলিয়ে, প্রথম দিনের খেলা ভারতের দিকেই ঝুঁকে আছে। দ্বিতীয় দিনে যদি আবহাওয়া বা ভাগ্য বিশেষভাবে উইন্ডিজের পক্ষে না যায়, তাহলে এই টেস্টেও হয়তো একই চিত্র দেখা যাবে—ভারতীয় ব্যাটারদের রানের সুনামি আর ক্যারিবীয় বোলারদের হতাশ মুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =