ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে শান্তির নোবেল পুরস্কার

স্টকহোম: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। শুক্রবার সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে নোবেল কমিটি এই ঘোষণা দেয়।

ভেনেজুয়েলার ৫৬ বছর বয়সী সাবেক সংসদ সদস্য মাচাডোকে দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় এবং স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য এই সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে।

আগামী ১০ ডিসেম্বর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুরস্কারের অংশ হিসেবে তিনি পাবেন ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ৯৬ কোটি টাকা) ও একটি সম্মাননাপত্র।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রাইডেনেস বলেন,
“এই শান্তি পুরস্কার একজন সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ শান্তির যোদ্ধাকে দেওয়া হচ্ছে। মাচাডো সেই নারী, যিনি ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন।”

মাচাডো ভেনেজুয়েলার বর্তমান স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর তিনি আন্তর্জাতিকভাবে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান, যার ফলে তাঁকে গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হয়।

পুরস্কারের ঘোষণার পর এক ভিডিও বার্তায় মাচাডো বলেন,
“এই পুরস্কার আমার ব্যক্তিগত সংগ্রামের জন্য নয়, এটি ভেনেজুয়েলার লাখো মানুষের দৃঢ়তার প্রতীক। আমরা শান্তি ও ন্যায় চাই।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁর এই অর্জনের প্রশংসা করেছে, যদিও মাদুরো সরকার একে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে।

মাচাডোর জন্ম ১৯৬৮ সালে ভেনেজুয়েলার বারকুইসিমেতো শহরে একটি ধনী পরিবারে। তিনি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব ভেনেজুয়েলা থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০০০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করে তিনি ভোলুন্তাদ পপুলার (Voluntad Popular) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর কেন্দ্রীভূত।
তিনি ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি ও নির্বাচনী কারচুপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

২০২৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করার পর তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও তিনি মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে তার লড়াই চালিয়ে যান।

এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), এবং গাজা সংঘর্ষে শান্তি প্রচেষ্টায় নিযুক্ত কিছু সংস্থাও ছিলেন।
এই সময় ট্রাম্প নিজেকে প্রার্থিতার উপযুক্ত হিসেবে প্রচার করলেও, মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কারণে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হন।

রাশিয়া পুরস্কার ঘোষণার ঠিক আগে ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নেয়, কিন্তু নোবেল কমিটি তা প্রত্যাখ্যান করে।

নোবেল কমিটির কাছে এ বছর মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়ে, যার মধ্যে ছিল ২২৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা।
মাচাডোর বিজয় ভেনেজুয়েলার ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরে। ওই নির্বাচনে মাদুরো ৫১% ভোটে জয়ের দাবি করেছিলেন, যদিও বিরোধীরা একে জালিয়াতি বলেছিল।

এই পুরস্কার লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্রের পক্ষে চলা সংগ্রামকে বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 1 =