বাংলা ক্রিকেটে কোচিং জগতে নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করলেন শুভময় দাস। সম্প্রতি তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বিসিসিআই লেভেল টু কোচিং কোর্স, যা দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ক্রিকেট কোচিং সার্টিফিকেশন হিসেবে পরিচিত। এর ফলে তাঁর কোচিং কেরিয়ার নতুন দিগন্তে প্রবেশ করল, এবং রাজ্যের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও তৈরি হল আরও এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। বিসিসিআই কর্তৃক আয়োজিত এই কোর্সটি সম্পূর্ণ করা এত সহজ নয়। লেভেল টু সার্টিফিকেশন পেতে প্রার্থীকে লেভেল ওয়ান কোর্সের পাশাপাশি কঠোর প্রায়োগিক, তাত্ত্বিক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের ধাপ পেরোতে হয়। সারা দেশ থেকে বাছাই করা সীমিত সংখ্যক কোচ এই কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শুভময় সেই নির্বাচিতদের মধ্যে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন—যা নিজেই এক বড় সাফল্য। বিসিসিআই লেভেল টু কোর্সে অংশ নিতে হলে কোচদের ক্রিকেটের খুঁটিনাটি জ্ঞান, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি, ম্যাচ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং আধুনিক ট্রেনিং পদ্ধতির উপর গভীর দক্ষতা দেখাতে হয়। শুভময় দাসের কথায়, “এই কোর্স শুধু টেকনিক শেখায় না, শেখায় চিন্তা করতে—কীভাবে একজন কোচ খেলোয়াড়ের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারেন, সেটাই আসল শিক্ষা।” “বিসিসিআই লেভেল টু পাস করা মানে শুধু একটা সার্টিফিকেট পাওয়া নয়, এটা একটা দায়িত্ব। এখন লক্ষ্য—এই শিক্ষাকে মাঠে কাজে লাগানো, যাতে আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটাররা আরও সঠিক দিকনির্দেশনা পায়।” শুভময় দাস গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল এবং স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে কোচ হিসেবে যুক্ত। তাঁর হাতে গড়ে ওঠা বেশ কিছু প্রতিভা ইতিমধ্যেই জেলা ও রাজ্য স্তরের দলে সুযোগ পেয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, শুভময়ের লেভেল টু সার্টিফিকেশন রাজ্যের কোচিং পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে। এক সিনিয়র ক্রিকেট প্রশাসক জানান, “বাংলা ক্রিকেটে এখন তরুণ, পেশাদার কোচের বড় প্রয়োজন। শুভময়দের মতো কোচরা সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন। বিসিসিআইয়ের লেভেল টু সার্টিফিকেট মানে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ—যা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা নেবে।” লেভেল টু সার্টিফিকেশন সাধারণত সেই কোচদের দেওয়া হয়, যারা পেশাদার ক্রিকেট বা রাজ্য স্তরে কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতে জাতীয় স্তরে কোচিংয়ের সম্ভাবনা রাখেন। এই কোর্সে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং টেকনিকের পাশাপাশি গেম অ্যানালিসিস, ডেটা ব্যবহারের কৌশল, খেলোয়াড়দের মানসিক সুস্থতা, এবং কোচিং-এ আইটি টুলস ব্যবহারের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। বিসিসিআই-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, লেভেল টু কোচরা জাতীয় বয়সভিত্তিক দল, রাজ্য ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এবং প্রিমিয়ার ক্লাবগুলিতে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেন। ফলে শুভময় দাসের সামনে এখন আরও বড় মঞ্চে কাজের সুযোগ খুলে গেল। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে শুভময় বলেন “আমি চাই, বাংলার প্রতিটি কোচ ও খেলোয়াড় যেন আধুনিক ক্রিকেটের চাহিদা বোঝে। আমাদের ছেলেরা খুব প্রতিভাবান, শুধু দরকার সঠিক গাইডলাইন ও প্রফেশনাল ট্রেনিং। আমি সেই দিকেই মনোযোগী হতে চাই।” তাঁর লক্ষ্য এখন রাজ্যের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একটি প্রফেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রাম শুরু করা, যেখানে বিসিসিআই-এর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী আধুনিক কোচিং পদ্ধতি শেখানো হবে। তার এই যাত্রা মোটেই সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে মাঠে টেনেছিল, কিন্তু পড়াশোনা ও পেশার ভারসাম্য রেখে কোচিংয়ে নিজের জায়গা তৈরি করা ছিল কঠিন কাজ। তবুও নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের জোরে তিনি সেই পথ পেরিয়েছেন। আজ তাঁর সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি রাজ্যের তরুণ কোচ ও ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। শুভময় দাসের এই অর্জন প্রমাণ করে, যদি ইচ্ছে থাকে এবং মন থেকে পরিশ্রম করা যায়, তবে সুযোগের দরজা খুলবেই। বিসিসিআই লেভেল টু কোচ হিসেবে তাঁর এই নতুন যাত্রা বাংলা ক্রিকেটে নিশ্চয়ই নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে। এখন দেখার, ভবিষ্যতে তাঁর তত্ত্বাবধানে কতজন তরুণ ক্রিকেটার দেশের জার্সি গায়ে চাপায়।

