দুবাই হোক বা কলম্বো—পরিবেশ, মাঠ, প্রতিপক্ষ বদলালেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই রুদ্ধশ্বাস লড়াই। এবার সেই উত্তেজনা ছড়াল মহিলা বিশ্বকাপের মঞ্চে। হরমনপ্রীত কৌর নেতৃত্বাধীন ভারতীয় মহিলা দল আবারও জয় পেল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, ৮৮ রানের ব্যবধানে। এর ফলে মহিলাদের ভারত-পাক দ্বৈরথে ভারত ১২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল।
ভারতের দেওয়া ২৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান শুরু থেকেই চাপে পড়ে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৪ রান তুলতেই রান আউট হয়ে ফেরেন মুনিবা আলি। তাঁর আউট নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক। ক্রান্তি গৌড়ের বলে প্যাডে লাগার পর লেগ বিফোরের আবেদন নাকচ হয়। কিন্তু দীপ্তি শর্মার সরাসরি থ্রো উইকেট ভেঙে দেয়। প্রথমে ফিল্ড আম্পায়ার মুনিবাকে নট আউট ঘোষণা করলেও তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেন, বল লাগার সময় তাঁর ব্যাট হাওয়ায় ছিল, তাই তিনি আউট। সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন মুনিবা ও পাক অধিনায়ক ফতিমা সানা, যিনি চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কও করেন। কিন্তু ফল বদলায়নি।
এরপর একে একে ধসে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। সিদরা আমিন একা হাতে লড়াই করলেও তাঁর পাশে কেউ দাঁড়াতে পারেননি। সাদাফ শামস, আলিয়া রিয়াজ, নাটালিয়া পারভেজ—কেউই বড় রান করতে পারেননি। সিদরা ৮১ রানের লড়াকু ইনিংস খেললেও স্নেহ রানার বলে আউট হওয়ার পরই পাকিস্তানের শেষ আশাও নিভে যায়। শেষমেশ ১৫৯ রানে অলআউট হয় তারা। ভারতের হয়ে ক্রান্তি গৌড় ও দীপ্তি শর্মা নেন ৩টি করে উইকেট, স্নেহ রানা নেন ২টি। দুটি রান আউট হয় পাকিস্তানের ইনিংসে।
এর আগে ভারতের ইনিংসেও দেখা যায় উত্থান-পতন। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর মাত্র ১৯ রানে আউট হন। তবে হারলিন দেওল লড়াই চালিয়ে যান, ৪৬ রানে ফিরে যান দুর্ভাগ্যবশত হাফসেঞ্চুরি মিস করে। জেমাইমা রদ্রিগেজ করেন ৩২ রান। একসময় পোকার উপদ্রবে ম্যাচ ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ থাকলেও ভারতীয় ব্যাটারদের মনোযোগ নষ্ট হয়নি। দীপ্তি শর্মা ও স্নেহ রানার ৪২ রানের জুটি ভারতের ইনিংসকে স্থিতিশীল করে। রানার ২০ রানের পর আউট হলেও দীপ্তি ৩০ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন।
তবে শেষের ঝড় তোলেন বাংলার রিচা ঘোষ। আট নম্বরে নেমে ২০ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থেকে দলের রান নিয়ে যান ২৪৭ পর্যন্ত। তাঁর ইনিংসই শেষ পর্যন্ত ম্যাচের গতি পাল্টে দেয়। পাকিস্তানের বোলাররা একাধিক সুযোগ নষ্ট করেন, ফিল্ডিংয়েও ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো।
অবশেষে ২৪৮ রানের লক্ষ্য পাকিস্তানের কাছে পাহাড়সম হয়ে ওঠে। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দল, তারপর থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সিদরা আমিনের সাহসী ইনিংস সত্ত্বেও ভারতের শৃঙ্খলিত বোলিং ও তীক্ষ্ণ ফিল্ডিং পাকিস্তানের ব্যাটারদের দম বন্ধ করে দেয়।
এই জয়ে ভারত আবারও প্রমাণ করল, মহিলা ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের আধিপত্য একচেটিয়া। মাঠে নাটক, বিতর্ক, রোমাঞ্চ—সবকিছুর শেষে বাইশ গজে আবার বাজল ভারতের জয়ের সুর।

