আহমেদাবাদে শুরু হওয়া ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সম্পূর্ণভাবে দখল নিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। ২৮৬ রানে এগিয়ে থেকে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৪৪৮। একদিকে ব্যাটারদের ঝলক, অন্যদিকে বোলারদের ধার—দুই দিক থেকেই শক্তির পরিচয় দিয়েছে ভারতীয় দল। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ম্যাচটি তৃতীয় দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি হতে পারে। প্রথম দিন টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোস্টন চেজ। কিন্তু শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি তাদের। ভারতীয় পেসার মহম্মদ সিরাজ এবং যশপ্রীত বুমরা একেবারে ছিন্নভিন্ন করে দেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনআপ। সিরাজ দারুণ সুইং ব্যবহার করেন, অন্যদিকে বুমরা তার নির্ভুল লাইন ও লেংথ দিয়ে চাপে রাখেন প্রতিপক্ষকে। দুইজন মিলে তুলে নেন ৭টি উইকেট। দীর্ঘদিন পর লাল বলের ক্রিকেটে ফেরা কুলদীপ যাদবও জোড়া উইকেট নেন। ফলে মাত্র ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল কিছুটা সাবধানী। দলের ভীত গড়ে দেন কেএল রাহুল। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান এবং অবশেষে ১২টি চার মেরে শতরান পূর্ণ করেন। মধ্যাহ্নভোজের পর তিনি আউট হলেও তখন ভারতের অবস্থান ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। রাহুলের ইনিংস দলের জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতি এনে দেয়। তবে দ্বিতীয় দিনের আসল নায়ক ছিলেন দুই ব্যাটার—ধ্রুব জুরেল এবং রবীন্দ্র জাদেজা। উইকেটকিপার-ব্যাটার জুরেল টেস্ট কেরিয়ারে প্রথম শতরান করলেন। ১৯০ বলে শতরানে পৌঁছনোর পর তিনি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। ইনিংস শেষ হয় ২১০ বলে ১২৫ রানে, যেখানে ছিল ১৫টি চার এবং ৩টি ছয়। তাঁর ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মবিশ্বাস ও আগ্রাসনের দুর্দান্ত মিশেল। অন্য প্রান্তে ছিলেন জাদেজা। বাঁহাতি অলরাউন্ডার ভরসা জুগিয়েছেন আক্রমণাত্মক শটে। ১৬৮ বলে তিনি পৌঁছান নিজের শতরানে। ৬টি চার ও ৫টি ছয়ে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। দুইজন মিলে ১৫০ রানের দারুণ জুটি গড়ে দলকে রানের পাহাড়ে তুলেছেন। এই সময় ভারতের রান ইতিমধ্যেই ৪০০ ছাড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনেই ভারতীয় ব্যাটাররা প্রমাণ করে দেন, ক্যারিবিয়ান বোলারদের জন্য এই পিচ একেবারেই সহজ নয়। ভারত যখন দিনের খেলা শেষ করে, তখন স্কোরবোর্ডে ঝুলছে ৪৪৮/৫। অর্থাৎ ২৮৬ রানের বিপুল লিড। এমন পরিস্থিতিতে বলা যায়, আহমেদাবাদ টেস্টের দিকনির্দেশ স্পষ্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ প্রথম ইনিংসেই ভেঙে পড়েছে। ভারতের বোলিং শক্তি আবারও দেখা যাবে দ্বিতীয় ইনিংসে, যা ক্যারিবিয়ানদের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা। অন্যদিকে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এখন শুধুই আত্মবিশ্বাস। সিরাজ, বুমরা, কুলদীপের বোলিং আক্রমণ এবং রাহুল-জুরেল-জাদেজার ব্যাটিং মিলে ম্যাচ প্রায় নিশ্চিত। টেস্ট জয়ের পথে ভারত একেবারেই এগিয়ে আছে। তৃতীয় দিনেই হয়তো ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে—এমনটাই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। আহমেদাবাদের দর্শকরা দেখলেন ব্যাটে-বলে ভারতের প্রায় নিখুঁত পারফরম্যান্স। শতরানের হ্যাটট্রিক হোক বা পেস আক্রমণের ধ্বংসাত্মক রূপ—প্রথম দুই দিনেই ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে, সিরিজের প্রথম টেস্ট একেবারেই তাদের দখলে। টেস্ট জয় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।

