“আইপিএলে জায়গা চাই, তাই ফখরকে আউট” ! ভারত পাক ম্যাচে আম্পায়ারকে নিশানা আফ্রিদির

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই সীমান্তের দুই প্রান্তে আবেগের বিস্ফোরণ। বাইশ গজের লড়াইয়ের বাইরেও রেষারেষি যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। এবারের দ্বন্দ্বে সেই উত্তাপ নতুন মাত্রা পেল ফখর জামানের আউটকে কেন্দ্র করে। ভারতীয় পেসার হার্দিক পাণ্ডিয়ার এক ডেলিভারিতে ফখরের ব্যাটে সামান্য কাণা লাগে বলে দাবি করে ভারতীয় শিবির। বলটি উইকেটকিপার সঞ্জু স্যামসনের হাতে পৌঁছনোর আগেই মাটিতে লেগেছিল কি না, সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। টিভি রিপ্লের এক দিক থেকে মনে হচ্ছে বল সরাসরি গ্লাভসে জমা হয়েছে। কিন্তু অন্য একটি অ্যাঙ্গেলে দেখা যায়, বল হয়তো মাটিতে আছড়ে পড়ে সঞ্জুর হাতে পৌঁছেছে। শেষ পর্যন্ত আম্পায়াররা আউটের সিদ্ধান্তই দেন। আর সেখানেই ঝড় উঠেছে পাকিস্তানি মহলে।

প্রাক্তন অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি চাঁচাছোলা ভাষায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “আম্পায়ারদেরও তো আইপিএলে জায়গা করে নিতে হয়। ভারতের বিরুদ্ধে না গেলে সুযোগ মেলে না।” অর্থাৎ তাঁর অভিযোগ সরাসরি ভারতের প্রতি পক্ষপাতিত্বের। আফ্রিদির দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবেই ফখরকে ভুল আউট দিয়েছেন আম্পায়াররা। পাকিস্তানের অন্যান্য প্রাক্তনীরাও এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট। তাদের বক্তব্য, এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মানা যায় না। ম্যাচ রেফারি এবং আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও জানানো হয়েছে। পাক দলের ম্যানেজার নাভেদ আক্রম চিমা ইতিমধ্যেই আইসিসিকে ইমেল করে তদন্তের দাবি তুলেছেন।

আসলে আফ্রিদির মন্তব্য নতুন কিছু নয়। ভারতকে ঘিরে তাঁর বিতর্কিত অবস্থান বহুবার শিরোনামে এসেছে। পহেলগাঁও হামলার সময় থেকেই ভারত-বিরোধী মন্তব্য যেন তাঁর রুটিনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও সেই একই ধারাবাহিকতায় আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের পিছনে ভারতের প্রভাব খুঁজে পেলেন তিনি। ভারতীয় শিবির অবশ্য এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ মনে করছেন, টেকনোলজির যুগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ টিকিয়ে রাখা কঠিন। অন্যদিকে পাকিস্তানি দর্শক ও সমর্থকদের ক্ষোভে ঘি ঢেলেছে আফ্রিদির এই বিস্ফোরক মন্তব্য।

ম্যাচের উত্তেজনাও এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। একদিকে পাক ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান হাফসেঞ্চুরি করে বন্দুক চালানোর ভঙ্গিতে সেলিব্রেশন করেন, অন্যদিকে ভারতের অভিষেক শর্মা অর্ধশতরানের পর প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্দেশে ‘ভালোবাসা ছোড়া’ ভঙ্গি করেন। মাঠে দুই দলের মধ্যে বাকযুদ্ধও কম হয়নি। সব মিলিয়ে ম্যাচের আবহ ছিল তপ্ত। তার উপর ফখরের আউট নিয়ে বিতর্ক পুরো বিষয়টিকে রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে তুলেছে।

ভারত-পাক ম্যাচে এমন ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও দেখা গেছে ছোট্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় বিতর্কে জড়িয়েছে দুই দেশের ক্রিকেট। তবে এ ধরনের আক্রমণাত্মক মন্তব্য খেলাধুলার সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। ক্রিকেটের বাইশ গজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই, কিন্তু মাঠের বাইরের সম্পর্ক তিক্ত না করে খেলার স্পিরিট বজায় রাখা জরুরি। আফ্রিদির মতো তারকার মন্তব্যে একদল সমর্থক উজ্জীবিত হলেও, বৃহত্তর ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তা বিভাজনকেই আরও প্রকট করছে।

সর্বোপরি বলা যায়, ফখর জামানের আউটকে কেন্দ্র করে যে ঝড় উঠেছে, তা মাঠের লড়াইকে ছাপিয়ে গেছে। ক্রিকেটের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হলে অভিযোগ-প্রতিআপত্তি নয়, প্রমাণের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ রায় দেওয়াই জরুরি। না হলে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব মাঠ থেকে রাজনীতির রণাঙ্গনে সরে যাবে—যার শেষ পরিণতি ক্রিকেটেরই ক্ষতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + 11 =