মহারণের আগে পাকিস্তানকে এড়িয়ে গেলেন সূর্য ! প্রশংসা করলেন ওমানের

এশিয়া কাপের মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। গ্রুপ পর্বে ‘হ্যান্ডশেক’ বিতর্ক সেই আবহকে আরও উস্কে দিয়েছিল। তাই রবিবারের সুপার ফোরের ম্যাচ ঘিরেও একই রকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির ইঙ্গিত মিলছে। সূর্যকুমার যাদবরা পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন করবেন না—এমন বার্তাই স্পষ্ট। কিন্তু একই সঙ্গে সূর্যের সাম্প্রতিক আচরণে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন ছবি। তিনি শুধু পাকিস্তানকে এড়িয়ে যাচ্ছেন না, বরং পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ করাতেই অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারের প্রতি মানবিকতার প্রকাশ ঘটালেন ভারত অধিনায়ক।

ওমান ম্যাচেই তার উদাহরণ মিলল। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকে ২১ রানের জয় নিশ্চিত করেছে ভারত। যদিও এই জয় সহজ ছিল না। ওমান শেষ পর্যন্ত ভারতকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করায়। দলের হয়ে সবচেয়ে নজর কাড়লেন ৪৩ বছর বয়সি আমির কালিম। করাচিতে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার একসময় পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন। পরে ওমানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যোগ দেন। ভারতের বিপক্ষে তাঁর লড়াকু হাফসেঞ্চুরি ওমানকে অনেকটা এগিয়ে দেয়। ম্যাচ শেষে সূর্য শুধু তাঁর পারফরম্যান্সের প্রশংসাই করলেন না, আলিঙ্গনও করলেন কালিমকে। সেই দৃশ্য যেন সম্পূর্ণ অন্য বার্তা দিল—ব্যক্তিগত খেলোয়াড়কে তিনি শ্রদ্ধা করেন, তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাকিস্তানকে একেবারেই অস্বীকার করেন।

পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সূর্যর মন্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর সরাসরি পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু সূর্য নির্দিষ্ট নাম উচ্চারণ না করে সংক্ষেপে বলেন, “হ্যাঁ, সুপার ফোরের জন্য তৈরি।” মাত্র চার অক্ষরের উত্তরেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন, পাকিস্তানকে তাঁরা শুধু প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে রাখছেন, বাকিটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ভারতীয় ড্রেসিংরুমে পাকিস্তান নিয়ে কোনও অযথা আলোচনার জায়গা নেই।

অন্যদিকে ওমানের পারফরম্যান্সকে যথেষ্ট সম্মান জানালেন ভারত অধিনায়ক। তিনি বলেন, “ওমান অসাধারণ ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। ওদের কোচ সুলু স্যরকে আমি বহুদিন ধরে চিনি। উনি আছেন মানেই দল মাটি কামড়ে লড়বে। ওদের ব্যাটিং দারুণ উপভোগ করেছি।” এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, ক্রিকেটের সৌন্দর্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তিনি আলাদা করে দেখতে জানেন।

সব মিলিয়ে সূর্যের অবস্থান দ্বৈত বার্তা বহন করছে। একদিকে পাকিস্তানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মাত্রায় দূরত্বে রাখা, অন্যদিকে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারকে আলিঙ্গন করে মানবিকতার প্রকাশ ঘটানো। ভারতীয় দলের এই অবস্থান হয়তো কেবল ম্যাচের ফলাফলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মাঠের বাইরের সম্পর্কেও তাৎপর্য বহন করবে। তাই রবিবারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা যেমন তুঙ্গে উঠছে, তেমনই সূর্যকুমারের আচরণ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই তীব্র হোক না কেন, মানবিকতার জায়গাটা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 4 =