“সৌরভের মস্তিষ্কই সাফল্য দেবে প্রিটোরিয়াকে” ভরসা অ্যালান ডোনাল্ডের

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামটা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায়। তিনি শুধু ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়কই নন, বরং একজন রূপকার, যিনি ভারতীয় ক্রিকেটকে আগ্রাসন এবং আত্মবিশ্বাসের নতুন পাঠ শিখিয়েছিলেন। ক্রিকেট ছাড়ার পরও তিনি নানা ভূমিকায় জড়িয়ে থেকেছেন ক্রিকেটের সঙ্গে—ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক, বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট এবং মেন্টর। এবার প্রথমবারের মতো দেখা যাবে তাঁকে কোচের ভূমিকায়। প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি, আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটমহল ইতিমধ্যেই উচ্ছ্বসিত।

প্রোটিয়া কিংবদন্তি অ্যালান ডোনাল্ড মনে করেন, সৌরভের ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক অসাধারণ ধারালো, যা প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসকে সাফল্যের পথে এগিয়ে দেবে। ডোনাল্ডের কথায়, “সৌরভের অভিজ্ঞতা যে কোনও দলের কাছে এক বড় সম্পদ। ওর পরিকল্পনা সবসময় আলাদা হয়। প্রিটোরিয়ার দল খুবই শক্তিশালী, আর বিপুল সমর্থকও রয়েছে। প্রতিটি ম্যাচে দর্শকভরা গ্যালারি থাকবেই।” ডোনাল্ড জানাচ্ছেন, সৌরভের কাঁধে চাপ থাকবে ঠিকই, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, ‘দাদা’ সবসময়ই দুর্দান্ত পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবেন।

ডোনাল্ডের সঙ্গে সৌরভের সম্পর্কও বহুদিনের। ২০১২ সালে পুণে ওয়ারিয়ার্সে খেলার সময় তিনিই ছিলেন কোচ। এর আগে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াইয়ে বহুবার একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেন। তাই তিনি ভালো করেই জানেন, সৌরভের নেতৃত্বের ধরন কতটা আলাদা। ডোনাল্ড বলেন, “এই ধরনের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে সময় খুব সীমিত থাকে। এখানে শুধু কৌশল নয়, খেলোয়াড়দের সামলানো এবং অনুপ্রাণিত করাও বড় দায়িত্ব। সৌরভ এ কাজটাও খুব ভালো করতে পারবে।”

প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালস এ বার নিলামে বেশ শক্তিশালী দল গড়েছে। ২২ বছর বয়সি বিধ্বংসী ব্যাটার ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে ১৬.৫ মিলিয়ন র‍্যান্ড (প্রায় ৮.৩১ কোটি টাকা) খরচ করে দলে নিয়েছে তারা। ব্রেভিসকে দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যৎ সুপারস্টার ধরা হয়। এছাড়া আছেন ক্যারিবিয়ান দানব আন্দ্রে রাসেল, যিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম মারকী নাম। দলে আরও বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার থাকায় প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই তুঙ্গে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথও সৌরভকে নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, “গতবার এই দলের কোচ ছিলেন জোনাথন ট্রট। এ বার সৌরভকে কোচ হিসেবে পাওয়া দারুণ এক অভিজ্ঞতা হবে। দাদা নিজের মতো করেই কাজ করে। দিল্লি ক্যাপিটালসে তাঁর অভিজ্ঞতা থাকায় জানা আছে, কীভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দলকে পরিচালনা করতে হয়। আমি নিশ্চিত, প্রিটোরিয়ার দল ওর কোচিংয়ে ভালো খেলবে।”

সৌরভকে নিয়ে এই প্রত্যাশার কারণও যথেষ্ট স্পষ্ট। দিল্লি ক্যাপিটালসের মেন্টর হিসেবে তিনি দলকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। যদিও সবসময় সাফল্য আসেনি, কিন্তু তাঁর ক্রিকেটীয় দর্শন ও কৌশল খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। এবার কোচ হিসেবে সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর হাতে। এই দায়িত্ব যে সহজ নয়, তা সৌরভ ভালো করেই জানেন। প্রিটোরিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে সাফল্যের শিখরে তুলতে গেলে তাঁকে পরিকল্পনা, অনুপ্রেরণা এবং নেতৃত্ব—সবকিছুই একসঙ্গে দেখাতে হবে।

সব মিলিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন ইনিংস। দাদার ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক, নেতৃত্বগুণ এবং আগ্রাসী মানসিকতা কি প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালসকে ট্রফি জেতাতে পারবে? সমর্থকদের মতো ক্রিকেটবিশ্বও এখন সেই উত্তর খুঁজতে অপেক্ষা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − eleven =