ভারত বনাম সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচটা একেবারেই একতরফা হয়ে উঠেছিল। এমন ম্যাচ দেখে দর্শকদের উচ্ছ্বাস কম থাকাটা স্বাভাবিক। কারণ শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল, আমিরশাহি ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। তাই গ্যালারিতে ফাঁকা আসনই বেশি চোখে পড়ল। ডাগআউটে বসে ভারতীয় প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের হাই তোলা যেন অনেক কিছুই বলে দিল— ম্যাচটা নিছক নিয়মরক্ষার মতোই হয়ে গিয়েছিল।
টস জিতে ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৫ ম্যাচ পর টসে জিতে কোনও বাড়তি পরীক্ষা না করে সহজ রাস্তাই বেছে নিলেন তিনি। শুরুতে আলিশান শরাফু ও মহম্মদ ওয়াসিম কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। শরাফু তো কয়েকটি বড় শটও খেললেন পাওয়ার প্লে-তে। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের ধার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ল। প্রথম ধাক্কাটা দিলেন জসপ্রীত বুমরাহ। তিনি যদিও তুলনামূলকভাবে বেশি রান খরচ করেছিলেন, কিন্তু ইয়র্কার দিয়ে শরাফুকে ফেরান।
এরপরই ম্যাচের ছবি পাল্টে যায়। সূর্য দ্রুত স্পিনারদের আক্রমণে নামিয়ে দেন। কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তী আর শিবম দুবে মিলে এমন বোলিং করলেন যে, আমিরশাহির ব্যাটাররা একেবারে দিশাহারা হয়ে গেলেন। লেগ স্পিন, গুগলি আর রং ওয়ানের ভেলকিতে তারা ব্যাট চালালেন আন্দাজে। তার ফলেই একের পর এক উইকেট পড়তে শুরু করে। ৮ ওভারে যেখানে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান তুলেছিল আমিরশাহি, সেখানে পরের পাঁচ ওভারের কিছুটা সময়েই পুরো দল গুটিয়ে যায় মাত্র ৫৮ রানে।
কুলদীপ একাই চার উইকেট তুলে নেন, শিবম দুবে নেন তিনটি। বরুণও দারুণ ছন্দে ছিলেন। অবাক করা ব্যাপার হল, এই তিন বোলার মিলে মাত্র ১৫ রান দেন। এর মধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে গেল আমিরশাহি।
৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করা যে ভারতের কাছে সময়ের ব্যাপার, তা সবারই জানা ছিল। আসল প্রশ্ন ছিল— পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই কি খেলা শেষ করতে পারবে সূর্যের দল? ওপেনার অভিষেক শর্মা ও শুভমন গিল নামলেন যেন সাজঘর থেকেই ম্যাচ শেষ করার সংকল্প নিয়ে। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করলেন অভিষেক। ঝড়ের গতিতে রান তুলতে লাগলেন দুই ওপেনার। অভিষেক যদিও ৩০ রান করে আউট হয়ে যান, কিন্তু তখনও ভারতের জয়ের জন্য আর কিছুই বাকি ছিল না।
শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৭ বলেই ৫৮ রান তুলে ৯ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত। এমন দ্রুত জয়ের পর এখন নজর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে। রবিবার এশিয়া কাপের সবচেয়ে বড় সংঘর্ষে নামবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ভারতীয় দল যে ছন্দে আছে, তাতে পাকিস্তানের চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই। সূর্যদের প্রস্তুতি নিখুঁত, আর সেই পরীক্ষা তারা উতরে গেল নিঃসন্দেহে। সারকথা, আমিরশাহির বিরুদ্ধে এই ম্যাচটা যেন ভারতীয় দলের জন্য ছিল নিছক ওয়ার্ম-আপ। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একই রকম আধিপত্য দেখাতে পারলে তবেই বোঝা যাবে, এই ভারতীয় দল এশিয়া কাপে কতটা ভয়ংকর।

