পাকিস্তানের অশান্ত উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া আবারও রক্তাক্ত ঘটনার সাক্ষী রইল। শনিবার এক ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বাজাউর জেলার খার তেহসিলের কাউসর ক্রিকেট গ্রাউন্ড। হঠাৎ বিস্ফোরণের জেরে প্রাণ হারান অন্তত একজন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে, তাঁদের মধ্যে শিশু রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। খেলাধুলার মাঠ, যেখানে থাকা উচিত ছিল আনন্দ আর ক্রীড়া–উন্মাদনা, সেখানে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর আতঙ্ক।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্ফোরণটি ছিল আইইডি (Improvised Explosive Device)। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ আধিকারিক ওয়াকাস রফিক। পুলিশ জানিয়েছে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত বিস্ফোরণ। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করেনি। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্প্রতি পাকিস্তান সেনা যে ‘অপারেশন সরবকফ’ চালিয়ে জঙ্গি দমনের চেষ্টা করছে, তারই পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।
ঘটনার সময় মাঠে চলছিল স্থানীয় স্তরের একটি ক্রিকেট ম্যাচ। তবে সেটি কোনো টুর্নামেন্ট নাকি প্রীতি ম্যাচ, তা স্পষ্ট হয়নি। বিস্ফোরণের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, আতঙ্কে মানুষ চারদিকে ছুটছেন, বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করছেন। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা এখনও স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা হয়নি। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে স্পষ্ট, মুহূর্তের মধ্যেই ক্রিকেটের মাঠ পরিণত হয় যুদ্ধক্ষেত্রে।
এই হামলার আগে মাত্র কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের অন্য একটি প্রদেশ, বালুচিস্তান, রক্তাক্ত হয়েছিল আত্মঘাতী বিস্ফোরণে। সেখানে একটি জনসভায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত 14 জন এবং আহত হন আরও কয়েক ডজন। সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। এখানেও কোনও সংগঠন দায় স্বীকার করেনি।
আসলে সাম্প্রতিক সময়ে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বারবার হিংসা, বিস্ফোরণ এবং জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। গত 14 আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসেও একই প্রদেশে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)। তারা একযোগে সাতটি জেলায় পুলিশ স্টেশন এবং চেকপোস্টে গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ছ’জন পুলিশ আধিকারিকের। গত শনিবারও কোহাট জেলার লাচি থানা এলাকায় গুলির লড়াইয়ে তিন জঙ্গিকে নিকেশ করেছিল পুলিশ। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার বাজাউরের মাঠে বিস্ফোরণ—যা প্রমাণ করে পরিস্থিতি কতটা অস্থির।
পাকিস্তানে খেলাধুলা বরাবরই মানুষের বিনোদন এবং সামাজিক সংহতির এক বড় ক্ষেত্র। বিশেষত ক্রিকেট সেখানে কেবল খেলা নয়, আবেগের জায়গা। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সেই নিরাপদ জায়গাকেও গ্রাস করছে। সাধারণ মানুষ, যারা খেলা দেখতে মাঠে জড়ো হয়েছিলেন, তাঁরা মুহূর্তে মৃত্যু ও আতঙ্কের ছায়ায় ঢেকে গেলেন।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান প্রশাসনের সামনে চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হচ্ছে। একদিকে সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি দমন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা—দুটো কাজই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক ধারাবাহিক বিস্ফোরণ দেখিয়ে দিচ্ছে, এখনও অনেকটা পথ বাকি। প্রশ্ন উঠছে, কবে ক্রিকেট মাঠে আবার শুধুই খেলার আনন্দ ফিরবে, মৃত্যুর আতঙ্ক নয়।

